বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন

পাহাড় ঘেঁষা রাস্তা, এ যেন এক স্বর্গরাজ্য

পাহাড় ঘেঁষা রাস্তা, এ যেন এক স্বর্গরাজ্য

জামালপুর প্রতিনিধি: 

“এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো? যদি পৃথিবীটা স্বপনের দেশ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলতো?” প্রাচীন বাংলার এই জনপ্রিয় গান আজো দর্শকদের মন কাড়ে। গারো পাহাড় ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় যে কোন পথিকের মনে গান বেজে উঠবে। দুপাশে পাহাড়। পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির গাছ। রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা পানির স্রোত। পাহাড়ের উপর দাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির আকাশ। যতো দূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝর্ণা, পাখির কলকাকলী আর দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ সব মিলিয়ে সুন্দরের অপূর্ব এক বিশাল ক্যানভাসে যে কোন প্রকৃতি প্রেমিককে কাছে মনোরম এক দৃশ্য। প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সারিসারি পাহাড়ি গ্রাম। বন, পাহাড়, পাথর, ঝর্ণা আর আদিবাসীদের নিজেদের মতো জীবন যাপন সত্যিই মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির অপরূপ মহাসমারোহ। মনকড়া পরিবেশে নিঃশ্বাস নিতে শহরের কোলাহল আর নাগরিক যন্ত্রণা থেকে একটু প্রকৃতি, আলো-হাওয়া, সুন্দরের টানে নির্দ্বিধায় শ শ প্রকৃতি প্রেমিদের পদচারণা ঘটে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার লাউচাপড়া পিকনিক স্পটে। স্পট থেকে শেরপুর জেলার গজনী অবকাশের দিকে যাওয়ার দুইপাশে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। বিধাতার স্সৃষ্ট এক অপরূপ সৌন্দর্য যেন এখানে এসে পড়েছে। জামালপুর জেলা পরিষদ ১৯৯৬ সালে ২৬ একর জায়গাজুড়ে পর্যটকদের কথা ভেবে গারো পাহাড়ের চ‚ড়ায় নির্মাণ করেছে পিকনিক স্পট । এখানে রাত্রি যাপনের জন্য রয়েছে জেলা পরিষদের একটি ডাকবাংলো। এখানে হিংস্র কোনো প্রাণী নেই।

ধানের মৌসুমে সীমান্তের ওপারের গভীর পাহাড় থেকে নেমে আসে ভারতীয় বন্যহাতির দল। বন্যহাতিগুলো গ্রামবাসীর কিছুটা ক্ষতি করলেও বর্তমানে প্রশাসনের পাহারার কারণে ক্ষতির পরিমাণ কমে গেছে। লাউচাপড়া’র এ পাহাড়ে রয়েছে নানান জাতের অসংখ্য পাখ-পাখালি। পাহাড়ের ভাঁজে-ভাঁজে অবস্থিত লাউচাপড়া, দিঘলাকোনা, বালুঝুড়ি, সাতানীপাড়া, পলাশতলা, মেঘাদল, শুকনাথপাড়া, গারোপাড়া, বালিজোড়া, সোমনাথপাড়া, বাবলাকোনা গ্রামে গারো, কোচ, হাজং আদিবাসীদের বসবাস। এ অঞ্চলের আদিবাসীরা বেশ সহজ-সরল ও বন্ধুসুলভ। ফলে অতি সহজেই ঘুরতে আসা পর্যটকদের সাথে ভাব হয়ে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এখানে ছুটে আসেন অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক। ভ্রমণ পিয়াসী আর পিকনিক করতে আসা অসংখ্য মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে নির্জন-নিভ‚ত এ অঞ্চলটি। জামালপুর সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে বকশীগঞ্জ উপজেলা।উপজেলা সদর থেকে পাকা রাস্তায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে এগুলেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষে প্রায় ১০ হাজার একর জায়গাজুড়ে বিশাল পাহাড়ি এলাকা। এখানেই লাউচাপড়া পিকনিক স্পট। পিকনিক স্পট থেকে বের হলেই চুখে পড়বে পাহাড় কেটে বানানো রাস্তা। রাস্তার দু’ ধারে বড় বড় সুউচ্চু পাহাড়। পাহাড়ের পাদদেশে পাহাড়িরা শীতের সবজি চাষ করেছে।

পাহাড়িদের এসব শীত কালীন সবজি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়।পাহাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটক সালাউদ্দিন বলেন, শীতের সকালে গারো পাহাড় আপনাকে সুপ্রভাত জানাবে অসংখ্য পাখির কলতানে। দুপুরে সবুজের উপরে ঢেউ খেলানো চিক চিক রোদ আকর্ষণ করবে। গারো পাহাড়ের ১৫০ ফুট উপরে নির্মিত ৬০ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠলেই এক লাফে চোখের সামনে চলে আসবে দিগন্ত বিস্তৃত সারি সারি সবুজ পাহাড়-টিলা যা মনের গহীনে শীতল হয়ে একাকার হয়ে যায়। টাওয়ারে উঠলেই চোখে পড়বে সীমান্তের ওপারের মেঘালয় রাজ্যের সুবিস্তৃত পাহাড় ছাড়াও তুরা জেলার পাহাড়ি ছোট্ট থানা শহর মহেন্দ মুগ্ধ করবেই। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে অজস্র ছোট-বড় স্বচ্ছ ঝর্ণা আর পাদদেশে রয়েছে স্বচ্ছ লেক। এ পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে নানা জাতের পাখি। চোখে পড়বে কাঠঠোকরা, হলদে পাখি, কালিমসহ অসংখ্য পাখির মেলা।

এখানে পড়ন্ত আলোর বিকালটা হয়ে ওঠে অসম্ভব মায়াবি। আর এখানকার পূর্ণিমা রাতের থই থই জোৎস্না আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে স্বপ্নলোকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী লামিয়া চৌধুরী প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়ে এমনটি বলেন। অপরদিকে লাউচাপড়া পর্যটন এলাকাকে কেন্দ্র করে স্বাবলম্বী হতে শুরু করেছে ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর সদস্যরাও। এখানে পর্যটকদের জন্য ঘোড়ার গাড়ি, বিশুদ্ধ পানি, শরবত, ডাব, খেলনাসহ নানান সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। তাছাড়া পর্যটন মৌসুমে পিকনিক স্পটে অনেক লোকের ভিড় হয়। এতে ব্যবসাও ভালো হয়। তবে পিকনিক স্পটটিকে আরো উন্নত করা হলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে এবং ভালো ব্যবসা করতে পারবো বলে জানান স্পটে ব্যবসা করা কয়েকজন ব্যবসায়ী। জামালপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, পিকনিক স্পটে বিশুদ্ধ পানিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও ছোট ছোট বাংলোসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে এসব কাজের বাস্তবায়ন করা হবে। যাওয়ার সহজ উপায়: জায়গাটি বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এলাকাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও ঢাকা থেকে শেরপুর হয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ। ঢাকা থেকে ডে-নাইট বাসে চলে আসতে পারেন শেরপুর। শেরপুর থেকে বাস, সিএনজি, অটো বা ভ্যানে শ্রীবর্দী কর্ণজোড়া হয়ে যাওয়া যায় বকশীগঞ্জের লাউচাপড়া। শেরপুর থেকে লাউচাপড়ার দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। আবার ঢাকা থেকে ট্রেনে জামালপুর জেলা শহরে এসে জামালপুর থেকে সিএনজি বা অটোয় বকশীগঞ্জ হয়ে লাউচাপড়ায় যাওয়া খুবই সহজ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




© All rights reserved © 2022 Protidiner Kagoj