রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন

কালীগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ 

কালীগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে পান চাষ 

জাহাঙ্গীর হোসেন, কালীগঞ্জ:  ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জের পৌর এলাকা থেকে শুরু করে শহর তলীর গ্রাম গুলোতে রয়েছে পান চাষের ব্যাপকতা।বিশেষ করে দুলালমুন্দিয়া, রায়গ্রাম, শালিখা, বলরামপুর, জামাল, কোলা বাজার ও বারোপাখিয়ার গ্রাম গুলোতে প্রায় চাষাবাদের এক চতুর্থাংশ জুড়েই এ পানের বরজ। পানের এই চাষাবাদটাও দীর্ঘ মেয়াদী। সারাটা বছর জুড়েই ব্যাস্ত থাকতে হয় এ অঞ্চলের পান চাষিদের। এই পান যাচ্ছে ঢাকা,খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ অন্যান্য শহরে। সব অঞ্চলেয় আছে কালীগঞ্জের পানের চাহিদা।কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হুমায়ুন কবির জানান, কালীগঞ্জের গ্রাম গুলোতে অনেক ভালো মানের পানের চাষ হয়। তার মধ্যে মিঠা, উজানি, কর্পুরির চাহিদা বেশি।
চাষিরা এখন জৈব সারের পাশাপাশি ব্যবহার করছেন টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়া, এসএমপি। বৈজ্ঞানিকভাবে চাষাবাদের কারণে ফলনও পাচ্ছে বেশি।সরেজমিনে পানের বরজে গেলে কথা হয় পান চাষি শ্যামলের সাথে। বলরামপুর মাঠে তার তিন দাগের দুই বিঘা জমিতে পানের চাষ আছে।পার্শবর্তী দাগে বরজ আছে তাপস সরকারের তিনি জানান, নতুন করে একটি বরজ করতে গেলে এক বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকার। জমি তৈরির পাশাপাশি এর উপকরণ গুলো বেশ ব্যায় বহুল।
তিনি আরও জানান, এই বরজটির বেস্টুনি দিতে লাগে বাশ, চটা,পাটকাঠি ও তার। গ্রামের বরজ গুলোতে অনেক সময় বেড়ায় ব্যবহার করা হয় কলাগাছের পাতা। জমি তৈরিতে প্রয়োজন উচু বন্যার পানি মুক্ত বেলে দোঁআশ ও এঁটেল দোঁআশ মাটি। বরজের ভিতরে থাকতে হবে নাতিশীতষ্ণ আবহাওয়ার ইমেজ। পানের লতা থেকেই পানের  গাছ হয়।তাপস জানান, মাটি চাষের পর এই লতাগুলো ৪৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে পুতে দিতে হয়। প্রতি শতকে ৩ থেকে ৬ইঞ্চি পানের কাটিং লাগে ৪৫০ থেকে ৫০০ পিচ। বরজের ভিতরে ২ ফিট চওড়া রাস্তা ও রাখতে হয়। প্রতিটি বেড তৈরি করতে হয় ৪ থেকে ৪.৫ ফিট। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দুরত্ব ১২ ইঞ্চি থেকে ১৬ ইঞ্চি ।
হেলায় গ্রামের পান চাষী আলতাফ হোসেন জানান,  জমিতে পান লাগানো হয়ে গেলে প্রতিনিয়ত ঝাঝরার মাধ্যমে দিতে হয় পানি সেচ। এখানে ভাল জাতের পানের জন্য সুষম সার ব্যবস্থপনাও জরুরি। পানের মান ভাল হলে এক বছর পর থেকে পান তোলা যায়। প্রতি বিঘায় পান ওঠে ৪ ডোল করে যার বাজার মূল্য ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। বছরে প্রায় দুই বার এই পান তোলা সম্ভব।পাশের শালিখা গ্রামের হোসেন আলী জানান, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে পানের ফলন ভাল হয়। তাদের এই আধুনিক পদ্ধতির পানের চাষাবাদে তারা এখন বেশ লাভবান হচ্ছেন । এই পান নিয়ে আসতে হয় শহরের বাজারে ।কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ প্রধান সড়কে চিত্রা নদীর ব্রিজের পাসে গড়ে উঠেছে এই পানের হাট। হাট বসতে শুরু করে সূর্য ওঠার অনেক আগেই । অল্প সময়েই হয়ে যায় পাইকারি বিক্রি । পান চাষির সপ্তাহের দুটি হাটেয় পান নিয়ে এই হাটে আসেন। পানের যথেষ্ঠ চাহিদা থাকায় এই পান বিক্রি করে হাসি মুখেয় ফিরে যান পান চাষিরা।বহুকাল ধরে সুনাম ধরে রেখেছেন কালীগঞ্জের পান চাষিরা। তদের সময়ের দাবি যথাযোগ্য সংরক্ষণ এবং বিদেশে রপ্তানি করে এ চাষাবাদের আরও সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করে চাষিরা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |