মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
কালিহাতী, টাঙ্গাইল :
টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী উপজেলার পৌর-শহরের এলেঙ্গার ঐতিহ্যবাহী শামসুল হক কলেজ মোড়ে ৩৫ বছরের পুরনো ধানের চারার হাটে কেনাবেচা চলছে। সকাল থেকে সারাদিন এ হাটে ধানের চারা পাওয়া যায়। এখানে বিভিন্ন জাতের ধানের চারায় সয়লাব রয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এবার রোপা আমন মৌসুমে চারা বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। তবে সার ও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে প্রান্তিক কৃষক এবং ডিজেলচালিত সেচ পাম্প মালিকরা উদ্বিগ্ন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা দর কষাকষি করে চারা কিনছেন। বগুড়া, মুক্তাগাছা, ঘাটাইল ও সখীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা কিনে আনেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো জেলার চাষীদের কাছে চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা সহ অন্য জেলায়ও বিক্রি করা হয়। এখানে ব্রি ৩৪, ৪৯, , ৭৫, ৮৭; বিআর ১১, ২২,২৩; বিনাধান ৭, ১৭, ২০; স্থানীয় জাত নাজিরশাইল, পাইজাম, , স্বর্ণা, কালিজিরা, গাইঞ্জা, পাটজাক প্রভৃতি জাতের ধানের চারা পাওয়া যায়। ধানের চারাভেদে প্রতি আঁটি (মুঠি) চারা তিন থেকে ৫ টাকায় ক্রয় করে চার থেকে ৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কালিহাতীর ইছাপুর গ্রামের আবদুল মাজেদ বলেন আমার নিচু জমিতে চারা তৈরি করলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ হাট থেকে চারা কিনি। এবার ১৫০ আঁটি স্বর্না ধানের চারা ৮০০ টাকায় কিনলাম। পৌরসভার পক্ষ থেকে চারার হাটে খাজনা আদায়কারী রাজু আহমেদ বলেন, এলেঙ্গায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো। তাই দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে আসেন। ১০০০ টাকায় ৪০-৫০ টাকা খাজনা নেওয়া হয়। আবার কম চারা কিনলে অনেকের কাছে থেকে টাকাই নেওয়া হয় না। এলেঙ্গার মশাজান গ্রামের আকবর আলী বলেন, আমি ২০ বছর ধরে ধানের চারার ব্যবসা করি। পাহাড়ী উঁচু এলাকা থেকে চারা কিনে এনে এলেঙ্গা হাটে বিক্রি করি। ১০০ আঁটি চারা বিক্রি করলে ৫০-১০০ টাকা লাভ থাকে। টাঙ্গাইলের দক্ষিণাঞ্চলসহ নিচু এলাকার চাষিরা এখান থেকে বেশি চারা কেনেন। কালিহাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ বলেন, এলেঙ্গা ধানের চারার হাট অনেক পুরাতন এবং জেলার অন্যতম। কেউ কেউ শুধু বিক্রির উদ্দেশ্য চারা উৎপাদন করেন। আবার অনেকে নিজের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত চারাগুলো এখানে বিক্রি করেন। জেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার বলেন, এ বছর রোপা আমন মৌসুমে জেলায় ৯৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ৭২ হাজার ৮১৮ হেক্টর জমি। গতবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৩ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমি। এবার জমিতে পানি না থাকায় সেচ মেশিনের সাহায্যে গত বছরের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলায় বিদ্যুৎচালিত মোট ২৫ হাজার ৯১৫টি সেচ পাম্পের মধ্যে এ মৌসুমে চালু হয়েছে ২৭৭৬টি। এছাড়া ডিজেলচালিত মোট ৩৩ হাজার ২৬৯টি সেচ পাম্পের মধ্যে চালু হয়েছে ৩১১৭টি। টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, সারের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। আর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পে সরকারি ভর্তুতি রয়েছে। যদি ডিজেলচালিত সেচ পাম্প মালিকদেরও ভর্তুকি দেওয়া হয়, তাহলে কৃষি খাতে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে না। কৃষকরা পুশিয়ে নিতে পারবেন।