মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

আমরা ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না: সিইসি

আমরা ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না: সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না। সংকট কেটে গিয়ে যদি রাজনৈতিকভাবে ফায়সালা হয় সব ভোট ব্যালটে হবে। ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ৩৯ নাগরিকের বিবৃতির পর সাংবাদিকদের এমন মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ থাকার পরও কোনো রকম ঐক্য মত ছাড়াই নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে মঙ্গলবার বিবৃতিতে ৩৯ বিশিষ্টজনরা বলেন, “আমরা মনে করি, কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উস্কে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে “ এরই প্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন,আমরা ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না। সংকট কেটে গিয়ে যদি রাজনৈতিকভাবে ফায়সালা হয় সব ভোট ব্যালটে হবে।ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না।

সিইসির বলেন, আমরা বরং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে যে সংকটগুলো দেখছি সে সংকট ইভিএম নিয়ে নয়, আরও মোটা দাগের সংকট। আমরা আশা করি, দোয়া করি এ সংকটগুলো কেটে যাক। কেটে গিয়ে যদি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ফায়সাল হয় সব ভোট ব্যালটে হবে, হান্ড্রেট পার্সেন্ট সমঝোতায় হয় অসুবিধা কি। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, সব দল যখন নির্বাচনে আসছে তাহলে সেটা ভালো উদ্যোগ।

তিনি আরও বলেন,আমাদের জন্য যেটা প্রয়োজন ইভিএমে ভোট করলাম কি করলাম না সেটা নয়, নির্বাচনটা সঠিক, অবাধ, নির্বিঘ্ন হলো কিনা- সেটা ইভিএমে হোক ব্যালটে হোক সেটা হওয়াটা বড় কথা। কাজে বড় ধরনের সঙ্কট ওখানে নয় আপনারও জানেন ওই সঙ্কট নিরসন হলে নির্বাচনটা সুন্দরভাবে উঠে আসবে।

সিইসি বলেন, যে কথাগুলো বলেছে তা বহুজন বলা হয়েছে। জাফর ইকবাল বলেছিলেন এটা খুব জটিল মেশিন নয়। ওই হিসেবে বলছেন যে এটা দুর্বল যন্ত্র। যন্ত্র দুর্বল কি সবল এটা আমার বিবেচনা করার বিষয় নয়। সবল হওয়ারও দরকার নেই দুর্বল হওয়ারও দরকার নেই। যন্ত্র কাজ করছে কিনা, এটাই আসল বিষয়।

আমরা হাজার হাজার নির্বাচন করেছি। হাজার হাজার ইভিএম ব্যবহার করেছি বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে। কোথাও আমাদের যন্ত্র ম্যালফাংশন করেছে, এমনটি ঘটেনি।

সিইসি বলেন,ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব, এই কথা তো প্রথমদিন থেকেই বলা হচ্ছে। যে ডিজিটাল জালিয়াতি হবে, ভোট চুরির মেশিন। আমরা এটা নিরসন করার জন্য প্রচুর সময় নিয়েছি। সব দলকে প্রযুক্তিবিদ নিয়ে এসে যাচাই করে দেখতে বলেছি। আমরাও ওদের কথা আমলে নিয়ে পরীক্ষা করেছি। আমরা দেখলাম বাজারে যে কথা চালু রয়েছে ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব, এর স্বপক্ষে আমরা কোনো প্রমাণ পাইনি। দলগুলো যদি নির্দিষ্ট না বলতে পারে, কিভাবে জালিয়াতি সম্ভব, কেউ যদি বলতে না পারে, দেখাতে না পারে, আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাচ্ছি ডিজিটাল জালিয়াতি সম্ভব নয়। আমাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে ডিজিটালি জালিয়াতি সম্ভব নয়, এটা কিন্তু আইনগত ভাষা নয়।

ইভিএমের অভিযোগ বিষয়ে সিইসি বলেন,যারা অভিযোগ করছেন তারাই আমাদের দেখিয়ে দেবেন লিখিত এবং মৌখিকভাবে যে কিভাবে জালিয়াতি সম্ভব। আজ অব্দি কোনো দল এই কথাটা বলেননি বা দেখাননি। দলগুলোর মধ্যে ইভিএম নিয়ে আস্থা নেই, এটা জানিনা কতটা আস্থা নেই। কতগুলো দল এসেছিল, আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। পাঁচ-সাতটি দল সরাসরি ইভিএমের পক্ষে বলেছে, কতগুলো দল শর্ত সাপেক্ষে বলেছে।

তিনি বলেন,ইভিএমের পক্ষে যারা বলেছেন তারা একেবারেই কম নয়। আমরা তাদের ভোটাভুটির জন্য ডাকিনি। মতামতের জন্য ডেকেছিলাম। আমরা সুবিধাগুলো তুলে ধরেছি। কারচুপি ও সহিংসতা নি:সন্দেহে কমে যাবে। আমরা স্টাডি করেছি, ওখানে আমার ভোট আপনি, আপনার ভোট আমি দিতে পারবো না। ওখানে p, সহিংসতা অনেকখানি কমে যাবে।

পেপার ট্রেইল উদাহরণ তুলে ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের বলেন-ভারতের যতো নির্বাচন হয়েছে, ওই পেপার ট্রেইল দিয়ে কেউ এমপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন, এমন নজির নেই। একটা হয়নি এমন।

আমাদের দেশে যে ব্যালটে হয়েছে গত ৫০ বছরে আদালতে মামলা করে পুনগননার পর সংসদের এসেছে এই তথ্য আছে কি-না? যদি না থাকে তাহলে এই একটা জিনিস নিয়ে আপনারা এতো ওঠেপড়ে লাগলেন কেন? বিগত ৫০ বছরে কোনো নির্বাচনে দেখা গেছে কি? আমাদের দেশে কারচুপি হয়, তাহলে মামলা পর কেউ তো জয়ী হয়ে আসেনি। কাজে নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করাটাই বড় কথা আস্থাভাজনভাবে।

সিইসি বলেন,আমরা যদি ইভিএম তুলে দিই। আন যদি কারচুপি হয় আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি কেউ পরাজিত হয়ে মামলা করে পুনর্গণনা করে জয়ী হয়ে সংসদে আসতে পারবেন না। এটা গ্রাউন্ড রিয়েলিটি। আমরা এটাকে আমলে নিয়েছি।ভারত কিন্তু বায়োমেট্রিক দিতে পারেনি আমাদের ইভিএমের মতো। ইউরোপের কথা বলা হচ্ছে। সেটা আমি জানি না কী জন্য তুলে দিয়ে ইভিএম। তবে ওদের যদি হাত তুলে ভোট দিতে বলেন, ওরা ভদ্রভাবে হাত তুলে ভোট দিয়ে চলে আসবেন। নির্বাচন নিয়ে ওখানে কারচুপি হয় না। ওদের ওখানে কোনো মেশিন বসাতে হয় না। কারণ ওদের ওখানে সভ্যতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা এমন একটা পর্যায়ে এসেছে যে ইভিএম কি আর ব্যালট হলেই কি।

তিনি আরও বলেন,আর্থিক সংকটের কথা আমি এপ্রিসিয়েট করি। এটা মনে করলে মন্ত্রণালয় দেখবে। এটা দেখার দায়িত্ব আমরা না। একটা সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা এটা লাগবে, সরকার বললো পয়সা দিতে পারবো না, আমরা তো জোরাজুরি করবোনা দেশের মানুষকে আর্থিক সংকটে ফেলে। সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য এবং অ-সুষ্ঠু নির্বাচনের যে আর্থিক মূল্য তা ইভিএমের মূল্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৫০ টি ইভিএমে করার আর ১৫০টি আসনে ব্যালটে ভোট করার। কোনো পরিবর্তন করতে হলে আমাদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করতে হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |