Noman Group Advertisement

ফেনীতে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু চলাচলের কোন কাজে আসে না

মোঃ আবদুল রহিম , ফেনী জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম

ছবি: প্রতিদিনের কাগজ

দাগনভুঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ায় উপজেলায় এসব সেতু রয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব সেতু মানুষের চলাচলে কাজে আসছে না

সেতু আছে কিন্তু সংযোগ সড়ক করা হয়নি এমন সেতু ফেনীতে ৪টি রয়েছে। দাগনভুঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ায় উপজেলায় এসব সেতু রয়েছে। সড়ক না থাকায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব সেতু মানুষের চলাচলে কাজে আসছে না, অথচ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগেই। তবে, সহসা সংযোগ সড়ক তৈরি করে সেতুগুলো চলাচল উপযোগী করার আশ্বাস দিচ্ছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনীর দাগনভুঞা, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ায় উপজেলায় প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি সেতু নির্মান করছে এলজিইডি। এর মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা থেকে বেকেরবাজার সড়ক ও ছোট ফেনী নদীর ওপর ৬০ মিটার ব্রিজ ৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ কাজ করেন মেসার্স ছালেহ আহমদ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সেতুর সংযোগ সড়কসহ ৩০ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। অন্যদিকে একই উপজেলার উত্তর জয়লস্কর থেকে ওমরপুর যাতায়তের জন্য সিলো-ি নয়া নদীর উপর সংযোগ ব্রিজ নির্মাণের কাজ করেণ মেসার্স হক ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

৮ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮১ মিটার সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। কিন্তু কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা জটিলতার কারণে এখনো ৭ ভাগ কাজ বাকি রয়েছে।

এছাড়া ছাগলনাইয়া মহামায়া ইউনিয়নে মুহুরী নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার মাওলানা ওবায়দুল হক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর থেকে ভোরবাজারে যাতায়াতের জন্য কালিদাস পাহ-ালিয়া নদীর ওপর ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলেও এখনো সেতু দু'টির সংযোগ সড়কের ভূমি জটিলতার কারণে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

মোমারিজপুর এলাকার আবদুল কালাম ধনা মিয়া জানান, সেতুটি আমাদের উপকারে করা হয়েছে কিন্তু উপকারের পরিবর্তে এখন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুতে ওঠার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। সেতুর উপরে উঠতে হলে মই দিয়ে উঠতে হবে। সেতুর সাথে আমার দোকান। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে ঠিকাদার। বলেছিল সেতু নির্মাণ শেষে আমার দোকান ঠিক করে দিবে। কিন্তু সেতুর কাজ বাকি রেখে ঠিকাদার এখান থেকে পালিয়ে গেছে। সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের নুর হোসেন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে

কিন্তু সুফল এলাকাবাসী ভোগ করতে পারছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

এদিকে সেতু নির্মাণ পাশে নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে এলাকাবাসী। মানুষের ঘর-বাড়ি আসবাবপত্র নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। তাই দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুগুলো চলাচলের উপযোগী করার দাবি এলাকাবাসীর।

মোমারিজপুর গ্রামের ফাতেমা খাতুন ও রহিমা বেগম জানান, ব্রিজের কাজের সময় নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। বন্যার সময় সেই বাদ দিয়ে পানি যেতে পারেনি। আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যায়। যার ফলে আমাদের ঘরবাড়ি, টিউবওয়েল, বাথরুমের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশটুকু যাওয়ার পথে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক বলেন, ৪টি ব্রিজের মধ্যে তিনটির সেতুর সংযোগ সড়কের জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। একটি অধিগ্রহণ ছাড়া করা যাবে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর জমি অধিগ্রহণের চাহিদা দেয়া হয়েছে। আশা করছি সেতুগুলোর সংযোগ সড়কের জায়গা নিয়ে জটিলতা ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিরসন হবে।

এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, যেহেতু অবকাঠামো নির্মাণ হয়ে গেছে। প্রত্যাশী সংস্থা যদি আমাদের নিকট প্রস্তাব পাঠায় সেইসাথে নিয়ম অনুযায়ী যদি ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান করে তাহলে জনসাধারণকে সেতুগুলো দিয়ে চলাচলের উপযোগী করার ব্যবস্থা করা যাবে।

Link copied!
Advertisement