প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দোয়ারাবাজার উপজেলার শ্যামলবাজারের ‘পান্ডারখাল ফসল রক্ষা বাঁধ’ একসময় ছিল মিনি পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ ছুটে আসতেন এখানে সময় কাটাতে। বাঁধের দু’পাশে সারি সারি গাছ, মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা নদী— প্রথম দেখায় মনে হতো এটি যেন কোনো দ্বীপ।
কিন্তু এখন দৃশ্যটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাঁধের দুই পাশে গড়ে তুলেছেন অবৈধ ইট-বালু-পাথরের ব্যবসা। এতে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁধের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি মরে যাচ্ছে গাছপালা। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই ভেঙে পড়তে পারে দীর্ঘ ৫০ বছরের পুরনো এই বাঁধ।
রোববার (৫ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধজুড়ে বালু-পাথরের স্তুপ, ভারী যানবাহনের চলাচলে দুলছে মাটি। সরকারি অর্থায়নে তৈরি বসার ছাউনিগুলো এখন কার্যত বিলীন। গাছের নিচে স্তূপ করে রাখা ইট-বালুর কারণে মাটির শিকড় শ্বাস নিতে পারছে না, শুকিয়ে যাচ্ছে গাছ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ—১৯৭৪ সালে ডেখার হাওরসহ আশপাশের হাওর রক্ষায় নির্মিত এই বাঁধ এখন দখলদারদের কবলে। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে ফসলহানির আশঙ্কাও রয়েছে। পাশাপাশি রাস্তার পাশে বালু রাখায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা পড়ছেন দুর্ভোগে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর প্রতিকার চেয়ে আমরা একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। মাঝে মাঝে জরিমানা হলেও কিছুদিন পর আবার আগের মতোই ব্যবসা শুরু হয়।
পথচারী নুরুল আমিন বলেন, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা থেকে সুনামগঞ্জে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু এখন এই বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
দোহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ শিক্ষার্থী মাসুদ রানা জানান, আমরা প্রতিদিন এই বাঁধ দিয়ে কলেজে যাই। একসময় এখানে বসে আড্ডা দিতাম, ছবি তুলতাম। এখন আর সেই পরিবেশ নেই চারদিকে শুধু বালু-পাথরের স্তুপ। তিনি দ্রুত অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করে বাঁধের সৌন্দর্য ও পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরূপ রতন সিংহ বলেন, বিষয়টি আমরা জানি। সরেজমিনে পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :