নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালপুরে দাঁড়িয়ে থাকা ‘ব্রাজিল বাড়ি’ এখন যেন কৌতূহলের প্রতীক। বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা শেষ হলেও রঙিন সেই বাড়িটি এখনও আলোচনায়—তবে এবার আলোচনায় ফুটবল নয়, এর মালিক জয়নাল আবেদীন টুটুলের তেলচুরির সাম্রাজ্য। একসময় যিনি ছিলেন যমুনা অয়েল কোম্পানির সাধারণ ক্যান্টিন বয়, আজ তিনি কোটি টাকার মালিক।
টুটুলের বাবা মো. রফিক ছিলেন যমুনা অয়েল কোম্পানির নিরাপত্তারক্ষী। বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক কোটায় অস্থায়ীভাবে ক্যান্টিন বয়ের চাকরি পান টুটুল। দৈনিক মজুরি ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে তার ভাগ্যে আসে নাটকীয় পরিবর্তন—ক্যান্টিন বয় থেকে ডিপোর গ্রেজার (তেল মাপার অপারেটর) পদে উন্নীত হন, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির গল্প।
যমুনা অয়েল কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সিবিএ নেতার সঙ্গে যোগসাজশে টুটুল গড়ে তোলেন তেল চুরির বড় সিন্ডিকেট। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার তেল পাচারের মাধ্যমে রাতারাতি গড়ে তোলেন বিপুল সম্পদ। কোম্পানির একাধিক সূত্র জানায়, একজন গ্রেজারের দৈনিক অবৈধ আয় এক লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে—যা মাস শেষে কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
স্থানীয়দের মতে, একসময় যার গ্রামের বাড়িতে ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ জমি, আজ তিনি একাধিক জমির মালিক। ফতুল্লার পিলকুনিতে চার শতাংশ এবং ব্রাজিল বাড়ির পাশে আরও আট শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি।
২০১৮ সালে টুটুল নির্মাণ করেন সাততলা বিশাল বাড়ি, পুরোটা রঙ করা ব্রাজিলের পতাকার রঙে—ছাদে উড়ছে বিশাল ব্রাজিল পতাকা, ফটকে লেখা ‘ব্রাজিল বাড়ি’। সে বছরই এখানে এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত জোয়াও তাবাজারা ডি অলিভেরিয়া জুনিয়র। এমনকি একই বছরের জুনে টুটুল রাশিয়ায় গিয়ে ব্রাজিল দলের খেলা দেখেছেন হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা ও ব্রাজিলের ফ্যান কার্ড।
যদিও টুটুল দাবি করেছেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তার ভাষ্য, পৈত্রিক জমি বিক্রি, আত্মীয়স্বজনের সহায়তা ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। তবে রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২০ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে মাত্র দেড় বছরের মধ্যেই পুরো ঋণ শোধ করেছেন—যা তার মাসিক ২৫ হাজার টাকার বেতনে প্রায় অসম্ভব।
ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) টুটুলের সম্পদের নথি জমা পড়েছে। তাকে তলব করা হলেও তদন্তের অগ্রগতি এখনও অজানা। কোম্পানির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “একজন মধ্যম পর্যায়ের কর্মচারী বিদেশে গিয়ে বিশ্বকাপ দেখা ও কোটি টাকার বাড়ি নির্মাণ করলেন কীভাবে—তা তদন্ত করা হবে।”
এবিষয়ে জয়নাল আবেদীন টুটুলের বক্তব্য জানতে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন উত্তর মেলেনি।
আপনার মতামত লিখুন :