চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন-এর বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব পদে থাকা এই কর্মকর্তা অনন্যা ও কল্পলোক আবাসিক এলাকায় নিজে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, সিডিএর বোর্ড সদস্য ও কর্মকর্তাদের নিয়মবহির্ভূতভাবে প্লট পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজে এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা কীভাবে এমন দুর্নীতির পথ বেছে নিতে পারেন।
সিডিএর আবাসিক এলাকার মূল্যবান প্লটগুলো বাজারদরের তুলনায় তিন থেকে ছয় গুণ কম দামে বিশেষ সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
জমির প্রকৃত বাজারদর (প্রতি কাঠা) প্রায় ২৫–৩০ লাখ টাকা, অথচ ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’দের জন্য বরাদ্দ মূল্য রাখা হয়েছিল মাত্র ৬ লাখ টাকা। ফলে তারা পেয়েছেন বিশাল আর্থিক সুবিধা।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, সিডিএর আবাসিক প্লট বরাদ্দ প্রবিধানমালা, ১৯৯৮-এর ৫ ধারা উপেক্ষা করা হয়েছে। ওই ধারায় বলা আছে, প্লট বরাদ্দের উদ্দেশ্যে চারটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করতে হবে।
কিন্তু আশরাফুল আমিনের দায়িত্বকালীন সময়ে এই নিয়ম উপেক্ষা করে গোপনে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যেখানে আবেদন বা যাচাইয়ের কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
কারা পেলেন সুবিধা? ২০০৯, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে তিন দফায় দেওয়া এই গোপন প্লট বরাদ্দে সুবিধাভোগীদের তালিকায় রয়েছ।
সাবেক মন্ত্রী: ৭ জন, সংসদ সদস্য (এমপি): ৮ জন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা: কমপক্ষে ১৫ জন, সাংবাদিক: ১১ জন, সিডিএর বোর্ড সদস্য: ১০ জন, সিডিএর কর্মকর্তা-কর্মচারী: ৬২ জন, নিজে মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন
অভিযুক্ত আশরাফুল আমিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
আইনগত প্রেক্ষাপট: সিডিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের ও অন্যদের নামে প্লট বরাদ্দ নেওয়া দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা লঙ্ঘনের শামিল।
উক্ত ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের বা অন্যের জন্য কোনো মূল্যবান সম্পদ বা আর্থিক সুবিধা অর্জন করেন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই প্লট কেলেঙ্কারির ঘটনায় চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিক সমাজের মধ্যে ক্ষোভ ও নিন্দা লক্ষ্য করা গেছে। তারা দাবি করছেন, অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আপনার মতামত লিখুন :