মৃত্যুফাঁদে খেয়া পারাপার: নিয়ম-নীতিহীনভাবে চলছে কমলনগরের মাতব্বরহাট ঘাট

অনুসন্ধানী প্রতিবেদক , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম

একেএম মাহমুদ রিয়াজলক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মাতব্বরহাট খেয়া ঘাট এখন এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। নদী পারাপারের একমাত্র ভরসা ছোট ছোট তিনটি নৌকা, যেগুলোতে নেই কোনো সিঁড়ি, জেটি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যাত্রীদের জীবন এখন সম্পূর্ণ ভাগ্যের ওপর নির্ভরশীল।

ঘাট ঘুরে দেখা যায় নৌকা ঘাটে ওঠা-নামার কোনো সঠিক ব্যবস্থা নেই, চারদিকে মলমূত্র ও আবর্জনায় ভরা এলাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ঘাটে গণশৌচাগার ও ছাউনি থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার অস্তিত্ব নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের আওতায় কমলনগর উপজেলার বাসিন্দা মুক্তার হোসেন ২০২৫–২৬ ও ২০২৬–২৭ অর্থবছরের জন্য ১০% মূল্যবৃদ্ধির শর্তে ঘাটটির ইজারা নেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নৌযানের তালিকা ও রেজিস্ট্রেশন জেলা পরিষদে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও মুক্তার হোসেন তা করেননি। জেলা পরিষদের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে ঘাট পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জেলা পরিষদের নথি তলব করলে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ঘাটের নৌযানের কোনো তালিকা সেখানে নেই। কর্তৃপক্ষ এক মাস সময় চেয়েছে, তবে তারা কেন এতদিন নিয়ম মানেনি সে বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো উত্তর দিতে পারেনি।

মাতব্বরহাট ঘাটের মাঝি আব্দুর রহমান বলেন, “প্রতিদিন ৫০–৬০ জন যাত্রী নিয়ে আমরা মতিরহাট, বাবুইয়ের ঘাট, কমিশনারের ঘাট পর্যন্ত পারাপার করি। নৌকা ছোট হলেও আমাদের জীবিকা এটাই।”

আরেক মাঝি নুরুদ্দিন জানান, “আমরা মাঝেরচর থেকে প্রতিদিন ১৫–২০ জন যাত্রী নিয়ে ভোলা পর্যন্ত যাই। দুধের গ্যালন, মালামালসহ নৌকা বোঝাই করে যাত্রা করি ঝুঁকি নিয়েই।”

বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি স্বীকৃত ঘাটে ন্যূনতম ৮টি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত নৌযান থাকতে হবে, প্রতিটি নৌকায় থাকতে হবে ২ জন করে মাঝি-মাল্লা, এবং নৌযানের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর স্পষ্টভাবে লেখা বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি যাত্রী ওঠা–নামার জন্য সিঁড়ি, জেটি, অস্থায়ী ছাউনি ও গণশৌচাগর নির্মাণ করা আবশ্যক। কিন্তু মাতব্বরহাট ঘাটে এসবের কিছুই নেই।

অভিযোগ রয়েছে, ইজারাদার মুক্তার হোসেন নিয়ম-নীতি না মেনে প্রায় ২২ লাখ টাকায় ঘাটটি অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তার হোসেন বলেন, “বিভাগীয় কমিশনার আমাকে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য ঘাট ভাড়া দিয়েছেন। আমি ১২ লাখ টাকা পেয়েছি, বাকিটা এখনো দেয়নি। আমাদের পরিবার বাপ-দাদার আমল থেকেই ঘাট চালাচ্ছে। এসব সরকারি নিয়ম কাগজে-কলমেই থাকে।”

বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক আব্দুর রহমান বলেন, “বর্ষায় ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে বারবার সতর্ক করার পরও এসব নৌযান দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। তারা কোনো নির্দেশই মানছে না।”

স্থানীয় যাত্রীদের দাবি, প্রশাসনের উদাসীনতা আর দুর্নীতির কারণে প্রতিদিন শত শত মানুষ জীবন নিয়ে খেলছে। দ্রুত ঘাটের সংস্কার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা অনিবার্য বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

Advertisement

Link copied!