২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আলোচিত হয় ছয়তলা রঙিন ভবন ‘ব্রাজিল বাড়ি’। তৎকালীন ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত ভবনটি পরিদর্শন করায় মানুষের আগ্রহ আরও বেড়ে গিয়েছিল।
আলোচিত সেই ‘ব্রাজিল বাড়ি’র মালিক যমুনা তেল কোম্পানির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী জয়নাল আবেদীন (টুটুল)। বহু বছর ধরেই তার বিরুদ্ধে সরকারি জ্বালানি তেল চুরি, দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকলেও পুরোনো সময়ে যথোপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন পরে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধানে দুদক মাঠে নামে। অঢেল সম্পদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদকের সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম সরেজমিন পরিদর্শনে যায়।
পরিদর্শনে শুধু ছয়তলা ‘ব্রাজিল বাড়ি’ নয় তার পাশেই জয়নালের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স থাকার প্রাথমিক প্রমাণও পাওয়া গেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি ও অভিযোগভিত্তিক অন্যান্য সম্পদের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়।
দুদকের হাতে থাকা তথ্যে জানা গেছে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে জয়নাল পলাতক ছিলেন। তবু তার অফিস নথিপত্রে দেখা যায়—নির্দিষ্ট সময়ে হাজিরা ও স্বাক্ষরের আইটেম রয়েছে; অভিযানের সময় তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি এবং সেই দিনের হাজিরা খাতার স্বাক্ষরও মেলেনি। সহকর্মীরাও বলেছেন, তিনি ছুটিতে আছেন; তবে কোনো ছুটির আবেদন দুদক টিমকে দেখাতে পারেননি।
দুদকের উপপরিচালক বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানিগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তেল চুরির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে; সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই ডিপো কার্যালয়ে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পরিদর্শনকালে জয়নালের মালিকানাধীন স্থাপনা ও অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত রেকর্ডপত্র ও তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে।
এক বিবরণে দুদকের আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘ব্রাজিল বাড়ি’র জমি জয়নালের বাবার নামে কেনা ছিল, প্রায় চার শতাংশ। সেই জমিতেই দেড় দশক আগে দুই ইউনিটের ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ভবনটি নির্মাণে আনুমানিক দেড় কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ব্রাজিল বাড়ির পাশেই জয়নালের নিজের কেনা আরও পাঁচ শতাংশ জমিতে একটি ডুপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে, যেখানে তার ব্যক্তিগত অফিস ছিল। স্থানীয়রা জানান, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে দুটি ভবনেই ভাঙচুর ও আংশিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
সূত্রে জানা যায়, জয়নালের বাবা মো. রফিক পূর্বে ডিপোতে দারোয়ানের চাকরি করতেন। তার মৃত্যুর পর জয়নাল ক্যানটিন কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ কর্মী হিসেবে চাকরি স্থায়ী হয়। পরবর্তীতে তিনি ‘গেজার’ হলেন যার কাজে তেল মাপার দায়িত্ব থাকে; সূত্রের দাবি, হিসাবের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে তিনি অবৈধ সম্পদ সঞ্চয় করেছেন।
ব্রাজিল বাড়ি ও ডুপ্লেক্স ছাড়াও অভিযোগ অনুযায়ী জয়নালের নামে ও স্ত্রীর নামে রয়েছে দুটি জাহাজ, দুটি ট্যাংক-লরি এবং একটি প্রিমিও মডেলের গাড়ি। পাশাপাশি তার গ্রামের বাড়িতেও একটি একতলা পাকা ভবন আছে, যেখানে বর্তমানে তার চাচা থাকেন।
অন্যদিকে, জয়নাল এক দশক ধরে যমুনা অয়েল কোম্পানি লেবার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, অতীতের ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক যোগাযোগের কারণে বহু বছর তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিষ্ঠান কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
আপনার মতামত লিখুন :