আগামী ১৩ নভেম্বর পলাতক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ ঘোষণাকে ঘিরে সারাদেশে উদ্বেগ, উত্তেজনা ও নাশকতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে হামলা ও অগ্নিসংযোগের হুমকি দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এসবকে গুজব ও অপপ্রচার হিসেবে দেখা হচ্ছে, কিন্তু যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেওয়া হয়েছে কঠোর প্রস্তুতি। সন্দেহভাজনদের ধরতে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে স্থল, রেল ও নৌপথে।
নাশকতা ও উদ্ধার অভিযান: রায়ের তারিখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় বেড়েছে নাশকতার চেষ্টা। শুক্রবার রাতে রাজধানীর কয়েকটি খ্রিস্টান স্থাপনায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। শনিবার রাতে মোহাম্মদপুরে একটি গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
ফেনীতে ঢাকা–চট্টগ্রাম রেললাইনের নাটবল্টু খুলে সিগন্যাল খুঁটিতে লাল কাপড় বেঁধে রাখে অজ্ঞাতরা।
বগুড়ার গাবতলীতে যৌথবাহিনীর অভিযানে ৩৯টি ককটেল ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার হয়। মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে ১৮টি ককটেল, ২৩টি পেট্রোলবোমা ও ২৫০ গ্রাম গানপাউডার জব্দ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি: রাজধানী ও সারাদেশে তল্লাশি, চেকপোস্ট বৃদ্ধি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রবেশমুখে বিশেষ নজরদারি এবং রেল, লঞ্চ ও সড়কপথে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা টহল চলছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বর নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়। যৌথবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে।”
রাজারবাগে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় ঢাকার ১৫০টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে।”
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের হাতে সংগঠনিক শক্তি না থাকলেও অবৈধ অর্থ ব্যবহার করে নাশকতা ছড়ানোর চেষ্টা চলছে, যার লক্ষ্য বিদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান,“বড় ধরনের সহিংসতার নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার বাড়ছে—যা হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না।”
ডিএমপি যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গুজব শনাক্তে সাইবার মনিটরিং টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।”
ডিবি পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ১০–১২ নভেম্বরের মধ্যে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে আওয়ামী লীগ স্লোগান ছড়ানোর পরিকল্পনা ছিল নিষিদ্ধ দলের।
ডিবি উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় ২৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা বেলুন উড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল।
ময়মনসিংহে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ: অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ফুলবাড়ী ও ত্রিশাল উপজেলায় প্রতিপক্ষদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ জানিয়েছে, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এম এইচ তামিম বলেন, ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে। ওই দিনই চূড়ান্ত রায়ের দিন নির্ধারণ হবে।”দেশজুড়ে এখন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সাঁড়াশি অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বার্তা স্পষ্ট —কোনো বিশৃঙ্খলা নয়, আইনের শাসনই এখন অগ্রাধিকার।”
আপনার মতামত লিখুন :