গাজীপুর সিটিতে দলে ফেরার অপেক্ষায় বিএনপির ২৪ নেতা–কর্মী

আখতার হোসেন , বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কৃত বিএনপির ২৪ জন প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থী এখন দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নেপথ্যে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা এখন গাজীপুরের সাংগঠনিক ভারসাম্য ও ভোটের সমীকরণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।

সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে গাজীপুরের ২৪ নেতা স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে তাদের সবাইকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

তালিকায় রয়েছেন: মোছলেম উদ্দিন চৌধুরী মুনা (১৬নং ওয়ার্ড), মাহবুবুর রশিদ খান শিপু (২৪নং), অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান বিকি (৪০নং), মো. তাজুল ইসলাম (৩৩নং), মো. হাবিবুল হাছান (৩৫নং), মো. আবুল হাশেম (৫৫নং), মো. সজিবুল (৪৮নং), মো. রফিকুল ইসলাম রত্না (১৭নং), আব্দুল হাকিম, খায়রুল আলম, শাহীন আলম, আহমেদ সরকার, মনিরুজ্জামান মনির, ফারুক হোসেন খান, কেয়া শারমিন, ফিরোজা আক্তার, হাসিনা মমতাজ, নাইমুল আজহার শিরিন, মাহফুজুর রহমান, দেলোয়ার হোসেন, মোরশেদ হোসেন মিন্নান, অ্যাডভোকেট আলম ও সাঈদা আফসানা সরকার প্রমুখ।

এদের অধিকাংশই মহানগর বিএনপি ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি বা অঙ্গসংগঠনের দায়িত্বে ছিলেন।

বহিষ্কৃতদের মধ্যে একাধিক নেতা সম্প্রতি দলে ফেরার আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছেন। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ও করেছেন। তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারকরা এখনো কোনো প্রকাশ্য সিদ্ধান্ত নেননি। একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “গাজীপুর আমাদের কৌশলগত এলাকা। এখানে মাঠে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়েছে। যারা ভুল করেছে কিন্তু মাঠে শক্তিশালী, তাদের ফেরানো নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এটি হবে নির্বাচন-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত।”

অন্যদিকে গাজীপুর মহানগর বিএনপির অভ্যন্তরে এই সম্ভাবনা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাংশ মনে করছে নেতৃত্ব ফেরালে মাঠে আন্দোলন সংগঠনে প্রাণ ফিরে আসবে। অন্যরা বলছে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত ভেঙে নির্বাচনে গিয়েছিল, তারা “শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী”; তাদের পুনর্বাসন দলীয় বার্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মহানগর বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেও প্রার্থী হওয়া নেতাদের অনেকেই ফিরিয়ে নিয়েছে দল। এসময়ে বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, গাজীপুরের মতো শহরাঞ্চলে বিএনপির মূল সংকট হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ঐক্যের অভাব। আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যদি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই ২৪ জন বহিষ্কৃত নেতার বিষয়ে সুচিন্তিত কৌশল গ্রহণ না করে, তবে তা ধানের শীষের বিজয়ের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে।

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা আরও বলেন, গাজীপুর হলো ঢাকার উপকণ্ঠের রাজনৈতিক তাপমাত্রা-নির্ধারক এলাকা। এখানে ভুল সিদ্ধান্ত পুরো নির্বাচনী বার্তা পাল্টে দিতে পারে। তাই কেন্দ্রের উচিত হবে শাস্তি ও পুনর্বাসনের মধ্যে ভারসাম্য রাখা।

দলে ফেরার প্রত্যাশায় থাকা এই ২৪ নেতার ভাগ্য এখন সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির হাতে। আসন্ন নির্বাচনের আগে যদি বিএনপি মাঠ পর্যায়ে ঐক্য ও কৌশলগত পুনর্গঠন না করতে পারে, তবে গাজীপুরের রাজনীতিই হতে পারে বিএনপির জন্য ‘পরীক্ষার ময়দান’ এবং পরিণতিতে বুমেরাং।

Advertisement

Link copied!