নির্বাচন সামনে রেখে কুমিল্লা সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধি, উদ্বেগ স্থানীয়দের

মোঃ আরিফুল ইসলাম ফারহান , কুমিল্লা জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারত সীমান্তসংলগ্ন কুমিল্লা এলাকায় বিদেশি অস্ত্রের চোরাচালান আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ চক্রগুলো সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্র বাংলাদেশে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। যদিও বিজিবি জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ও অবৈধ পণ্য প্রতিরোধে সীমান্তজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তঘেঁষা কুমিল্লা জেলার প্রায় ১০৬ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গত দুই মাসে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযানে অন্তত ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ৩ নভেম্বর ভোরে কুমিল্লার সদর দক্ষিণের যশপুর সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়ে বিজিবি সদস্যরা অস্ত্র চোরাচালানের নতুন কৌশল আবিষ্কার করে। মাদকের আড়ালে রাখা প্যাকেট থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলি ও বিভিন্ন অস্ত্রের যন্ত্রাংশ। ঘটনার পর থেকেই সীমান্ত এলাকায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।

বিজিবি জানিয়েছে, কুমিল্লা সীমান্ত এখন অস্ত্র চোরাচালানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়েছে। কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, “নির্বাচনের আগে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য অস্ত্র ঢোকানোর চেষ্টা চলছে—এমন গোয়েন্দা তথ্য আমাদের আগে থেকেই ছিল। এখন সীমান্তে টহল ও নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে সীমান্ত এলাকায় বিজিবিসহ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শহরজুড়েও চেকপোস্ট স্থাপন, তল্লাশি ও অপরাধ দমন কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে কোনো গোষ্ঠী নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে।

স্থানীয় কলামিস্ট মাসুক আলতাফ চৌধুরী মনে করেন, সীমান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চোরাচালানের একটি সক্রিয় পথ তৈরি হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চোরাচালানকারীরা আরও সংঘবদ্ধ হচ্ছে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

যশপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরশাদ বলেন, “আগে শুধু চিনি বা গরু আসত। এখন নাকি অস্ত্রও ঢুকছে—এটা খুবই ভয়ংকর।” স্থানীয় দোকানি নূর নবী বলেন, “রাতে অপরিচিত লোকজনের যাতায়াত বাড়ছে। আগে ভাবতাম মাদকের সাথে জড়িত, এখন শুনি অস্ত্রও আসে। নির্বাচন সামনে, তাই সবাই ভয়ে আছে।”

শিক্ষক আবদুল খালেক বলেন, “নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা থাকে। কিছু গোষ্ঠী হয়তো অস্থিরতা সৃষ্টি করতে অস্ত্র সংগ্রহ করছে।” এলাকার আরেক বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম বলেন, “এখন রাতে ঘর থেকে বের হতেও ভয় লাগে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অস্ত্র ধরার খবর আসে।”

বিজিবির হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে কুমিল্লা সীমান্তে প্রায় ৬০ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদক, ভারতীয় পোশাক, আতশবাজি ও অস্ত্র। নির্বাচনকে ঘিরে চোরাচালানকারীরা আরও সক্রিয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ। তিনি বলেন, টহল, গোয়েন্দা নজরদারি ও স্থানীয়দের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

Advertisement

Link copied!