ঈশ্বরগঞ্জে নবান্নের আমেজে ধান মাড়াই উৎসব

উবায়দুল্লাহ রুমি , নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪৬ পিএম

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ গ্রামীণ জনপদজুড়ে এখন আমন মাড়াইয়ের ব্যস্ততাকে ঘিরে শুরু হয়েছে নবান্নের আনন্দঘন উৎসব। মাঠের পর মাঠে সোনালি ধানের মিঠে দোলা; কোথাও চলছে ধান কাটা, কোথাও মাড়াই, আবার কেউ ব্যস্ত ধান সেদ্ধ ও শুকাতে। ভোর থেকেই কৃষক-কৃষাণীরা দল বেঁধে মাঠে ছুটে যাচ্ছেন। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ।

পুরুষদের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও সমানতালে অংশ নিচ্ছে এই কৃষি উৎসবে। সারা দিনমান হাড়ভাঙা খাটুনির পর সন্ধ্যায় বিভিন্ন মোড়ের চায়ের দোকানে জমে উঠছে কৃষকদের আড্ডার উচ্ছ্বাস। অনেক গ্রামে ধান মাড়াই উপলক্ষে রাতে আয়োজন করা হচ্ছে কিচ্ছার আসর। বাড়িতে চলছে অতিথি আপ্যায়নের ধুম। গৃহবধূরা কাজের ফাঁকে নতুন চাল দিয়ে পিঠা তৈরি করছেন। শীতের সকালে পিঠা খেয়ে কৃষকরা কাস্তে হাতে যাচ্ছেন ফসলের মাঠে। রাতে এ বাড়ি ও বাড়ির নারীরা একত্রে বসে নবান্ন উৎসব আর পিঠাপুলির পায়েস তৈরির আলোচনায় মেতে উঠছেন। সব মিলিয়ে গ্রামীণ জনপদে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। স্থানীয় কৃষকদের মতে, এ বছর ফলন আশাতীত হওয়ায় তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

ঈশ্বরগঞ্জের চরাঞ্চলের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, "এবার ধানের ফলন সত্যিই ভালো। একদিকে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, অন্যদিকে আগাম জাতের ধান দ্রুত কাটায় আমাদের জমিতেই আবার সরিষা বপন করতে পেরেছি। এতে আয়ও বাড়বে।"

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি আমন মৌসুমে ১৯ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫০৫ হেক্টরে ব্রি ধান-৪৯ ও ১০৩ এবং ২ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল আগাম জাতের ব্রি ধান–৭১, ৭৫, ৮৭ ও বিনা-১৭ জাতের আশাতীত ফলন হয়েছে। আগাম জাতের এসব ধান নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কর্তন করে সংশ্লিষ্ট জমিতে সরিষা ও গমের আবাদ করেছেন কৃষকরা। আগামী আমন মৌসুমে সারা উপজেলায় আগাম এই উপশী জাতের আবাদ বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

নিজতুলন্দর ব্লকের কৃষক আব্দুস সামাদ ভূঁইয়া বলেন, "অগ্রহায়ণের শুরুতেই আগাম জাতের ব্রি ধান পেকে যায়। কম সময়ে বেশি ফলন। এই দুই সুবিধার কারণে আমরা এসব জাত বেশি আবাদ করছি। ধান কেটে সরিষা বা গম লাগাতে পারায় বাড়তি লাভ হচ্ছে।"

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান জানান, "চলতি মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭ হাজার ৪৪১ মেট্রিক টন। তবে কৃষকদের পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া ও আগাম জাতের ধানে উচ্চ ফলনের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে আরও উৎসাহিত করা হচ্ছে।"

তিনি আরো জানান, "ঈশ্বরগঞ্জের গ্রামীণ জনপদ এখন ধান কাটার উৎসবে মুখর। কৃষকের কষ্টের ফসল ঘরে ওঠায় গ্রামে ভর করেছে নবান্নের আনন্দ, আর সেই আনন্দে একাকার হয়ে গেছে পুরো জনপদ।"

Advertisement

Link copied!