গাজীপুরের পূবাইল থানা এলাকার মাজুখান পশ্চিম পাড়ার ফাল্গুনী টাওয়ারের দ্বিতীয় তলার একটি বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার হলো নারী স্কুল শিক্ষিকা শাহানার (৫৮) মরদেহ। শনিবার ভোররাতে পুলিশ দরজা ভেঙে ফ্ল্যাটে ঢুকে খাটের ওপর পড়ে থাকা পচাগলা লাশ উদ্ধার করে। ফ্ল্যাটটির বাসিন্দা শাহানা বেগম (৫৮) ঢাকার বনশ্রী এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জের ভাটিরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। প্রায় চার বছর ধরে তিনি পূবাইলে একা থেকে স্কুলে যাতায়াত করতেন।
তিন দিন ধরে বন্ধ দরজা, ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ এবং 'শুয়ার ঘর' হিসেবে পরিচিত পরিত্যক্ত আবহ—সব মিলিয়ে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সদস্য মো. শহিদুল হক জানান, ৩-৪ দিন ধরে শাহানা বেগমের দরজা বন্ধ ছিল। বাইরে থেকে বারবার ডাকলেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাত ১১টার দিকে তিনি বিষয়টি পূবাইল থানা পুলিশকে জানান।
খবর পেয়ে পূবাইল থানার একটি ইউনিট শুক্রবার রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েই পুলিশ দেখতে পায় ভেতর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পরে শাহানার ছেলে ও ফ্ল্যাট মালিক সাইফুল আলমকে ডেকে এনে তাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করা হয়। ভেতরে ঢুকেই দেখা যায় খাটের ওপর অর্ধগলিত অবস্থায় পড়ে আছেন প্রধান শিক্ষিকা শাহানা বেগম। মৃত শাহানার মেয়ে বলেন, "মা হার্টের রোগী ছিলেন, একাই থাকতেন। হঠাৎ তিন দিন ফোন না পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। তদন্তে জানা গেছে, ৩০ নভেম্বর বিকেল ৫টার দিকে শাহানা তার বোন আফরোজা সুলতানা রোজির সঙ্গে সর্বশেষ হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলেন। এরপর থেকে তিনি আর কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
পূবাইল থানার ওসি মোল্লা খালিদ হাসান বলেন, "লাশের অবস্থা ও দুর্গন্ধ দেখে ধারণা করছি, ৩০ নভেম্বর সন্ধ্যার পর যেকোনো সময় তার হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে। ঘরের দরজা ভিতর থেকে লক ছিল, কোনো নাশকতার চিহ্ন পাওয়া যায়নি।" পুলিশ ঘটনাস্থলে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশটি শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। ওসি মোল্লা খালিদ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :