শেরপুরের শ্রীবরদী ও জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় আবারও অবৈধ সার পরিবহনের ঘটনা ধরা পড়েছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে ভায়াডাঙ্গা থেকে বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপাত্তি এলাকায় যাওয়ার পথে ১৫ বস্তা সারসহ একটি ভ্যান আটক করেন রাণীশিমূল ইউনিয়নের বাঘহাতা গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। স্থানীয়দের দাবি—আরও ৩টি ভ্যান যখন খুব দ্রুত গতিতে চলে যায় ঠিক তখনই অবৈধভাবে সার পাচারের খবর পেয়ে তারা পথরোধ করে ভ্যানটি থামিয়ে দেয় এবং সারসহ চালককে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আটককৃত ১৫ বস্তা সারের মধ্যে রয়েছে ৮ বস্তা টিএসপি ও ৭ বস্তা ডিএপি। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে শ্রীবরদী উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, ঘটনাটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, ইউএনওর নির্দেশ অনুসারে জব্দ করা ১৫ বস্তা সার ও ভ্যানটি স্থানীয় এক বিএনপির ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, মো. হযরত আলীর দোকানে নিরাপদে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সার পাচারের তথ্য অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ভ্যান চালকের ব্যবহৃত একটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন কৃষি উপসহকারী মো. আব্দুল হাকিমের জিম্মায় রাখা হয়েছে।
ভ্যান চালক মো. শফিক মিয়া সাংবাদিকদের জানান, তিনি জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কামালপাত্তি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা জব্বার মিয়া। তিনি আরও বলেন, একই এলাকার সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন তাকে এই সার পরিবহনের কাজ দেন। ভায়াডাঙ্গা বাজারে বিনা অ্যান্ড মেঘনা ট্রেডার্স নামের একটি দোকান থেকে মালিক মো. বিল্লাল হোসেনের নিকট ১৫ বস্তা সার বাবদ ২৩ হাজার ৮০০ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে ওই সার ভ্যানযোগে কামালপাত্তি এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয়দের হাতে তিনি আটক হন।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এলাকায় কৃষি মৌসুমে সার সংকট দেখা দিলেই একটি বিশেষ চক্র অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলার সীমানা পেরিয়ে অবৈধভাবে সার পাচার করে থাকে। বিশেষ করে ভায়াডাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী বিল্লাল এসব কাজ দীর্ঘদিন যাবত করে আসছেন। এতে প্রকৃত কৃষকরা সঠিক সময়ে সঠিক মূল্যে সার পায় না। তারা এ ধরনের ঘটনায় নিয়মিত নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা দাবি করেন।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে—প্রাথমিকভাবে আটক সার, ভ্যান এবং মোবাইল ফোন জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে যারা জড়িত প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি সার পরিবহনে অনুমোদন, চালান ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :