বৃহস্পতিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ অপরাহ্ন

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিয়োগ জালিয়াতি’ তদন্তে ইউজিসি’তে চিঠি

কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিয়োগ জালিয়াতি’ তদন্তে ইউজিসি’তে চিঠি

জাককানইবি

নিজস্ব সংবাদদাতা:  ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) ‘হল সুপারভাইজার’ পদে নিয়োগ জালিয়াতি তদন্ত পূর্বক পদক্ষেপ গ্ৰহণের আবেদন করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-তে চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যায়টির দুজন সাবেক শিক্ষার্থী । গত ২৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) ঢাকার আগারগাঁও প্রশাসনিক এলাকায় অবস্থিত ইউজিসি ভবনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার হাতে এই চিঠি হস্তান্তর করেন অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান সোহাগ এবং জাহানারা মুক্তা ।

আরও পড়ুন: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর ৪৭ তম প্রয়াণ দিবস পালিত
সম্প্রতি, ৮/১১/২০২১ ইং তারিখে প্রকাশিত এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (স্বারক নং- জাককানইবি/রেজিঃ/ডিজনি/১১৫১/২০১৮/২৪২৮)- এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে ‘হল সুপারভাইজার’ পদে দুটি আসনের বিপরীতে ১৪ জন প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা গ্ৰহণ করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার মধ্যে ৭ জন উত্তীর্ণ হয়ে ৩১ আগষ্ট ২০২৩ তারিখে মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্ৰহণ করেন , মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্ৰহণকৃত প্রার্থীদের মধ্যে দুজন নারী এবং ০৫ জন পুরুষ অংশগ্রহণ করেন ‌। পরবর্তীতে গত ২রা অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২ তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনক্রমে ২জন পুরুষ প্রার্থী হল সুপারভাইজার হিসেবে চুড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন । এই দুটি পদের ১টি ছাত্রীদের আবাসিক হলের জন্য বরাদ্দ এবং এতে যোগ্য নারী প্রার্থী থাকা সত্বেও পুরুষ প্রার্থী নিয়োগ দেয়ায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখর। যদিও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত কোন বিধি উল্লেখ ছিল না । অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে দেয়া চিঠিতে বলা হয় : হল সুপারভাইজার পদে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও নগ্ন দুর্নীতির মাধ্যমে ‘সোহেল রানা’ নামে একজন ব্যাক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয় , যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ নীতিমালাকে কলঙ্কিত করেছে।

চিঠিতে আরও বলায় হয় , যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তার প্রাথমিক যোগ্যতায় উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায় জিপিএ -৫ এর মধ্যে ২.৮০ পেয়েছে,যা তৃতীয় শ্রেণী হিসেবে গৃহীত এবং এটি প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পরিপন্থী। তাছাড়া হল সুপারভাইজার পদে সরকারি /আধা সরকারি / স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজে কমপক্ষে ০৩ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতার শর্ত থাকার উল্লেখ থাকলেও যোগদানকৃত প্রার্থী সোহেল রানা তার অভিজ্ঞতায় ত্রিশাল উপজেলার ‘গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসা’য় কম্পিউটার অপারেটর কাম হিসাব রক্ষক হিসেবে ০২ বছর ০১ মাসের একটি জাল সার্টিফিকেট প্রদান করে। পরবর্তীতে ঐ মাদ্রাসায় খোঁজ নিয়ে জানা যায় এই নামে কোন ব্যাক্তি ওই প্রতিষ্ঠানে কখনো কোনদিন কর্মরত ছিলেন না। যার প্রমাণ ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিজে গণমাধ্যমের কাছে ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়াও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে একটি কপি সংগ্রহ করি যেখানে হল সুপারভাইজার পদে সোহেল রানা আবেদনের (ক) শর্ত পূরণ না করার কারণে তিনি লিখিত পরিক্ষার কার্ড পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছিলেন।কিন্তু রাতের আধারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নগ্ন দুর্নীতি করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী বাতিল হওয়া প্রার্থীকে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে তাকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে চাকুরীতে যোগদান করিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মৌলি আজাদ বলেন, আমরা একটি আবেদনপত্র পেয়েছি । বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং ইউজিসি’র নীতিমালা অনুযায়ী খতিয়ে দেখবো ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্ৰহণ করবো । উল্লেখ্য, নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে ইউজিসি’তে চিঠি দেয়ার পর মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিব বরাবর এর অনুলিপি প্রেরণ করা হয় । ইতিপূর্বে ১৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে , ভাইবা বোর্ডে নারী কটুক্তি ও অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন উক্ত দুই শিক্ষার্থী । এই সংবাদ সম্মেলনের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিকভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়ে সাবেক এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের হুমকি প্রদান করে । পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ত্রিশাল থানায় সাধারণ ডায়রি করার জন্য গেলে উক্ত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিডি গ্ৰহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন । এরপর ২২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে , সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ আখ্যায়িত করে পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পুণরায় একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে , অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মোকদ্দমা দায়ের করতে বাধ্য হবেন – এই মর্মে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয় ।

 

প্রতিদিনের কাগজ

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ মিডিয়া লিমিটেড © All rights reserved © 2023 Protidiner Kagoj |