মিনহাজ দিপু,কয়রা (খুলনা)
সুন্দরবন উপকূলে নারীর ক্ষমতায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য খুলনার কয়রা উপজেলায় প্রান্তিক জনগন কে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবতার তরঙ্গ।
ঘূর্ণিঝড় আইলা, সিডর, আম্পানে বিধ্বস্ত উপকূলীয় কয়রা উপজেলার অসহায় জনগনের দুঃখ দুর্দশা দেখে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য ২০১৯ সালের ১৩ মে কিছু স্বপ্নবাজ যুবকদের নিয়ে বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের ল্যাব অপারেটর আয়ুব হোসেন মানবতার তরঙ্গ সংগঠন গড়ে তোলেন।
কয়রা উপজেলার বেদকাশী দিঘীর পাড়ে অবস্থিত মানবতার তরঙ্গ অফিস থেকে জানা যায়,মানবতার তরঙ্গের প্রতিষ্ঠাতা আয়ুব হোসেন কলেজে অধ্যায়নকালে টিউশনির টাকা দিয়ে এলাকার অসহায় ও দুস্থ মানুষদের সহযোগিতা করে আসছে।তিনি একটি সংগঠনের প্রয়োজন অনুভব করায় মানবতার তরঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে এলাকার তরুণ ও শিক্ষার্থীদের কে সংগঠনের সাথে যুক্ত করেন।সংগঠনটির পথ চলার তিন বছরে চার হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌছানো, শতাধিক বিধবা নারীকে স্বাবলম্বী করা,উপজেলায় শতাধিক গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপন, দশ হাজার জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ, এলাকার স্কুল ও কলেজে তিন হাজার বৃক্ষরোপন, ত্রিশটির অধিক মেডিক্যাল ক্যাম্প ও ঔষধ বিতরণ, বিভিন্ন দুর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী ও নগদ সহায়তা প্রদান, করোনাকালীন সময়ে দুই হাজার মাক্স ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে।
মানবতার তরঙ্গের প্রতিষ্ঠতা ও সভাপতি আয়ুব হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের এসডিজি লক্ষ্য কে সফল করতে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে মানবতার তরঙ্গ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকার অসহায় মানুষদের সেবা প্রদান করে আসছে।তিনি আরো বলেন,বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় মানবতার তরঙ্গ কাজ করছে।টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে মানবতার তরঙ্গ।
ইউনিয়নের বেদকাশী গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা সাবিনা খাতুন বলেন,মানবতার তরঙ্গ থেকে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন পেয়ে দর্জির প্রশিক্ষণ নিয়ে আমি এখন স্বাবলম্বী, মাসে সেলাইয়ের কাজ করে নয় হাজার টাকার মত আয় করি,সংসারের খরচের পাশাপাশি মেয়ের স্কুলের খরচ দিতে পারি।মানবতার তরঙ্গ সহযোগিতা করায় পরিবার নিয়ে এখন ভাল আছি।
মানবতার তরঙ্গের সদস্য কৌশিনা সুলতানা মিতা বলেন,উপকূলীয় কিশোরীদের স্যানিটারি প্যাড ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক ক্যাম্পেইন এর পাশাপাশি অসহায় দুস্থ নারীদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে।এলাকায় বাল্য বিয়ে ও যৌতুক প্রতিরোধ বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগাম করায় মানুষ আগে থেকে সচেতন হয়েছে, এখন এলাকায় বাল্য বিয়ে ও যৌতুকের দাবি কমে গেছে।
উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো.নুরুল ইসলাম সরদার বলেন,মানবতার তরঙ্গ এলাকায় অনেক সামাজিক কাজ করে একাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।আম্ফানে ইউনিয়ন প্লাবিত হলে সংগঠনটি নয় মাস এলাকার মানুষের বিভিন্ন ভাবে সেবা করেছে।এলাকার মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবারহের জন্য টিউওয়েল স্থাপন করে খাবার পানি সরবারহ করেছে।এলাকার জন্য সংগঠনটির কাজ দেখে সত্যি অনেক ভাল লাগে।