মো. হুমায়ুন কবির, গৌরীপুর:
গৌরীপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘ সাত বছর পার হলেও শুরু হয়নি এর পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম। কবে চালু হবে তাও অনিশ্চয়তা মাঝে অপেক্ষায় আছে গৌরীপুর বাসী। এদিকে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম। বেহাত হয়ে যাচ্ছে আবাসিক ভবনের বিভিন্ন সামগ্রী। এ ছাড়া করোনাকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ। সেবা নিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
এদিকে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে অচল হয়ে আছে গৌরীপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি। অথচ এটি চালু হলে অনেক মা ও শিশু চিকিৎসাসেবা নিতে পারত।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, গৌরীপুরে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে সাত বছর আগে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়নি। ১০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গর্ভবতী মা ও শিশুরা। চিকিৎসকের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না অপারেশন থিয়েটার।
অথচ সেখানে গর্ভবতী মায়েদের জন্য আলট্রাসাউন্ড, সার্জারিসহ রয়েছে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা। চিকিৎসকদের জন্য রয়েছে তিনতলাবিশিষ্ট আবাসিক ভবন। নিয়োগ দেওয়া হলেও কর্মস্থলে যোগদান করছেন না চিকিৎসকরা। নেই প্রয়োজনীয় জনবলও। ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বে আছেন ডা. ফেরদৌস আরা ও ডা. এহতেশামুল হক।
এদিকে চিকিৎসকদের থাকার জন্য নির্মিত ভবনটি ব্যবহারের আগেই বিভিন্ন সামগ্রী চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা, বাথরুমের বেসিন, পাইপ, কমোড, এসএস পাইপে নির্মিত দামি রেলিংসহ চুরি হয়ে গেছে অনেক কিছু। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে ভাঙা কাচের টুকরো। এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেবা না পেয়ে এ অঞ্চলের মা ও শিশুদের যেতে হচ্ছে ময়মনসিংহ জেলা শহরের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। এতে ভোগান্তির শিকার হওয়ার পাশাপাশি কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাঁদের।
গৌরীপুর পৌরসভার পূর্ব দাপুনিয়া মহল্লার বাসিন্দা সোহেল আহমেদ বলেন, ‘মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি হওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও আমরা এখান থেকে সেবা পাচ্ছি না।’
জানা গেছে, ২০১৪ সালের এপ্রিলে তৎকালীন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মজিবুর রহমান ফকির কেন্দ্রটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেই থেকে এভাবেই পড়ে আছে মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রটি। একজন সিনিয়র নার্স সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সপ্তাহে দুই দিন দুজন গাইনি চিকিৎসকের দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও তাঁদের দেখা মেলে না।
এরই মধ্যে গত বছরের ২৬ নভেম্বর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তখন তিনি আশ্বস্ত করেন পূর্ণাঙ্গ সেবাদান শুরুর। এরপর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও জনবল নিয়োগ হলেও তাঁরা যোগদান করেননি।
কর্মস্থলে না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. এহতেশামুল হক বলেন, ‘গৌরীপুর মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। এ কারণে সব সময় উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না।’
গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন বলেন, ‘মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও জনবল আছে। কিন্তু তাঁরা যোগদান করছেন না। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অব্যবহৃতভাবে পড়ে আছে। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। আমরা সিজারসহ পূর্ণাঙ্গ সেবা কার্যক্রম শুরু করতে পারব।’