শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
মাগুরা প্রতিনিধি
নব্বই দশকের সোমালিয়া কিংবা ইথিওপিয়া নয়; ছবিটি সাম্প্রতিক, এই বাংলাদেশের। পুলিশ প্রশাসনের বদান্যতায় মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সবচেয়ে উপরের তলায় স্থান মিলেছে তার। হাসপাতালের ডাক্তার নার্স নিয়মিত খোঁজ খবরও নিচ্ছেন। অসম্ভব রকম পুষ্টিহীনতার শিকার কঙ্কালসার ব্যক্তিটি আজ এই সমাজের একটি উদাহরণ হয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছেন-জানান দিচ্ছেন এখনও; একদিন তিনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন।
একদিন, হয়তো পঞ্চাশ কিংবা ষাট বছর আগে মানুষটি কারো ঘর আলো করে এই পৃথিবীতে তার আগমনী বার্তা শুনিয়েছিলো। কোনো মায়ের কোলে শুয়ে হয়তো শুনেছিলো আজানের ধ্বনী অথবা কানে কানে কেউ শুনিয়েছিলো তাকে ভগবান কৃষ্ণের নাম। বাবা-মা তার একটি নামও রেখেছিলেন হয়তো অনেক আহ্লাদ করে। কিন্তু হাসপাতালের খাতায় আজ তার নামটি ‘অজ্ঞাত’।
বৃহস্পতিবার রাতে মাগুরা সদর থানা পুলিশ জেলার সদর উপজেলার খালিমপুর এলাকায় মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এর আগে দুপুরের পর থেকেই স্থানীয়রা তাকে চাঁদরে মোড়ানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। কঙ্কালসার প্রাণসর্বস্ব মানুষটি দিনের আলোতে সেখানে পড়ে থাকলেও খুবই বেশি আগ্রহ দেখাননি অনেকেই।
সন্ধ্যারমুখে স্থানীয় এক যুবক পুলিশের ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানালে মাগুরা সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরে হাজরাপুর গ্রামের মতিয়ার লস্কার নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, তিনি একদিন হয়তো কোনো না কোনো পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু আজ রোগাক্রান্ত। হয়তো সেই পরিবার কিংবা কারো কাছে বোঝা হয়ে উঠেছেন। তাই অজ্ঞাতসারে ফেলে গেছেন এখানে। এটি চরম মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা। আমরা ওই ব্যক্তিটির পরিচয় উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অজ্ঞাত এই রোগীটি সম্পর্কে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক রফিকুল আহসান জানান, তিনি চরম পুষ্টিহীনতায় ভূগছেন। হয়তো যার আশ্রয়ে ছিলেন তিনি সামান্য পরিমাণ খাদ্য তাকে দিয়েছেন বিধায় এখনো বেঁচে আছেন। তবে হাসপাতালে ভর্তির পর শরীরে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে। সাথে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও চলছে।
যথাযথ চিকিৎসায় তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন, আবার নতুন চোখে দেখবেন তার অনেকদিনের চেনা মানুষগুলোকে সেই প্রত্যাশা চিকিৎসকদের।