শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫৭ অপরাহ্ন
মনোনেশ দাস : বৃহত্তর ময়মনসিংহের শীর্ষ পত্রিকা দৈনিক জাহানে সাব এডিটর হিসাবে চাকুরি করেছি । অফিসের পাশে একটি কক্ষে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক পিতৃতুল্য কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান শেখ । আমাকে যারপরনাই স্নেহ করতেন । সেসময় আমার খোঁজ খবর নিতেন, মাতৃতুল্য হাবিবুর রহমান শেখের সহধর্মীনি অধ্যাপিকা রেবেকা ইয়াসমিন । স্নেহ আর ভালবাসা দিয়ে আমাকে বেঁধেছিলেন দুজনে । অভিভাবক হিসাবেও পেয়েছিলাম দুজনকে । ২০১২ সালের মার্চে হাবিবুর রহমান শেখ, ২০২০ সালের ২৭ জুলাই । ওনার সহধর্মীনি পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপিকা রেবেকা ইয়াসমিনকে হারিয়েছে । দৈনিক জাহান পত্রিকায় নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা হিসাবে সংবাদ পরিবেশন করে আসছিলাম । পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোঃ আবদুল হাসেম ভাই একদিন আমাদের বাসায় এলেন। বললেন, সম্পাদক সাহেবের নির্দেশ এখন থেকে আপনাকে অফিস সামলাতে হবে । সাব এডিটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে । আমার আগে জাহানে অনেক গুণী সাংবাদিক দায়িত্ব পালন করেছেন । প্রখ্যাত সাংবাদিক কবি প্রয়াত মুশাররাফ করিম, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, কাজী ইয়াসিন, আতাউল করিম খোকন, প্রয়াত সুলতান উদ্দিন খান আরো অনেক গুণী সাংবাদিকগণ। সাংবাদিকদের সাথে সম্পাদকের বনি বনাদ অর্থাৎ পারস্পরিক দৃঢ় সম্পর্ক রৌদ্র-ছায়ার মত । ক্ষুদ্র জীবনের দীর্ঘ সময়ের সংবাদকর্মী হিসাবে বহুবার মনে হয়েছে, এপেশা থেকে যেন থেমে যেতে পারি সমে এসে। যথা সময়ে থেমে যেতে পারাটাও একটি সাংবাদিকতার শিল্পকলার প্রতিরূপ । আবার ভাবি, ডাক্তারি চাকুরী ছেড়ে রোগী দেখা যায়, তেমন শিক্ষক প্রাইভেট পড়ান, আইনজীবী আরো রকত পেশার মানুষ আছেন যাদের অবসর নেই । আমরা সাংবাদিকরাও এমনই । মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত অবসর আছে কি ? চারণ সাংবাদিক অগ্রজ মোনাজাত উদ্দিনকে আমরা আরো বেশি চিনেছি জেনেছি উনার মৃত্যুর পর । মৃত্যুটাও রহস্যে ঘেরা । আমার জীবনেও কি তাই ঘটতে চলেছে ? এমন প্র¤œ আসে দৈনন্দিন ভাবনায় । মানুষ মরে যায় । রেখে যান কর্ম। কর্মগুন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে । দৈনিক জাহান বাঁচিয়ে রাখবে হাবিবুর রহমান শেখ ও উনার সহধর্মীনি অধ্যাপিকা রেবেকা ইয়াসমিকে । আমি প্রতিদিন সক্রিয় সাংবাদিকতায়। কিছু পাওয়ার আশায় নয় । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে নাগরিক সাংবাদিকতার পরিরিধি গুরুত্ব দুটোই বেড়েছে । নাগরিক সাংবাদিকদের লেখা মানুষ , প্রাণি পরিবেশ, আরো কতো বিষয় যা সমাজের অনেক কল্যাণে আসছে । পত্রিকা অনলাইন পোর্টালের সংবাদ দেখে অবহেলিত মায়ের পাশে মমতার আঁচল বিছিয়ে দিয়ে সহযোগীতায় এগিয়ে আসছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরব গাঁথা, শহীদদের আতœত্যাগ চাপা পড়ে থাকা সত্য অনেক ঘটনা উঠে আসছে আমাদেও মত সাংবাদিকদের লেখনিতে । হাবিবুর রহমান শেখ সাংবাদিকতায় আমার শিক্ষাগুরু ছিলেন । তিনি ময়মনসিংহস্থ বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যায়ের ছাত্র ছিলেন । বিশ^বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে তিনি দৈনিক জাহান পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন। আমাকে শিখিয়ে গেছেন, অনুসন্ধানী খবরের খোঁজে বিচরণে দৃঢ়তা রেখে কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় । আমলা, রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্নস্তরের শ্রেণি পেশার মানুষদের নিকট থেকে কিভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে হয় । সেইসব সত্য বিষয় সংবাদপত্রে তুলে ধরে সমাজের উপকার করা যায় । সত্য সামনে আনার ঝুঁকি কিভাবে এড়াতে হয়। সাংবাদিক আর রাজনৈতিক দলের নেতা- কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক রৌদ্র-ছায়ার মত । আমাদের জীবনটাও নাগরিকের মত । শেখ হাবিবের উপদেশগুলি সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় জমা হয়েছে । দৈনিক জাহানে আমার লেখায় উনার সন্মান বেড়েছে বলতেন হাবিবুর রহমান শেখ। আমাকে শিখিয়ে গেছেন, সাংবাদিকতায় কিভাবে সততা ও নির্ভীকতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় । কিভাবে সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা করতে হয় । কারো চাপে অপ্রিয় সত্য সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকা নয়। মাদকের গডফাদার, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে সংবাদ লেখার কৌশল । বাক স্বাধীনতার পক্ষে স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে লিখতে হবে। মিথ্যে, উস্কানিমূলক, সমাজের জন্য ক্ষতিকর, অনৈতিক, অনিরপেক্ষ সংবাদ বর্জন করতে হবে । শিখিয়ে গেছেন তিনি। হাবিবুর রহমান শেখ বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংবাদপত্র পরিষদের (বিএএসপি) সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন, উনার শেষ ইচ্ছে ছিল, মফস্বলের সংবাদপত্রকে কমিউনিটি নিউজ পেপার হিসাবে মূল্যায়ন করা হোক । দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে এবিষয়ে উনার একটি লেখা প্রকাশ হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৮ জুন । আমিও উনার এই দাবির সাথে একমত । হাবিবুর রহমান শেখ ও অধ্যাপিকা রেবেকা ইয়াসমিন আজ আমাদের মাঝে নেই। রেখে গেছেন, কর্মগুণ । যে কর্মগুণ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে অনন্তকাল। পরপারে ভাল থাকুন আপনরা। সৃষ্টিকর্তার কাছে এই প্রার্থনা ।