সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
ঢাকা: ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন-বায়তুল মোকাররম এলাকায় জামায়াতে ইসলামী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সেদিন রাজনৈতিক সহিংসতায় কয়েকজন নিহত হওয়ার ঘটনা আলোড়ন তোলে। জামায়াতের দাবি, লগি-বৈঠার নির্মম প্রহার, গুলি আর ইটপাটকেলের আঘাতে সেদিন রাজধানীর পল্টনেই তাদের ছয় কর্মী নিহত হন এ ঘটনায় পল্টন ও শাহবাগ থানায় পৃথক পাঁচটি মামলা হয়। পল্টন থানায় দায়ের করা পাল্টাপাল্টি দুটি মামলার একটি ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই প্রত্যাহার করা হয় ক্ষমতাসীন ১৪ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা অন্য মামলাগুলোও পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হয়। সেসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা আসামি ছিলেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আসামি করে যে মামলাটি হয়, তা উচ্চ আদালত স্থগিত রেখেছেন। ২৮ অক্টোবর স্মরণে জামায়াত-শিবির সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে।
রাজধানীতে এক সমাবেশে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নিকৃষ্টতম একটি দিন ২৮ অক্টোবর। ২০০৬ সালের এই দিনে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আমাদের সমাবেশে শেখ হাসিনার নির্দেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করে। তিনি বলেন, সেদিন লগি-বৈঠার তাণ্ডবে দেশ, রাজনীতি, সমাজ তার পথ হারিয়েছিল। মানবতার মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে। মামলা সূত্রে জানা যায়, সেই ২৮ অক্টোবরের সংঘাতের ঘটনা ঘটে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ডাকা অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে। জামায়াত-শিবিরের নিহত নেতাকর্মীরা হলেন- জসিম উদ্দিন, মোজাহিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া শিপন, ফয়সাল ও হাবিবুর রহমান।
প্রকাশ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষের সামনে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে দুর্বৃত্তরা লাশের ওপরে উঠে উন্মত্ত নৃত্য করে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। আহত জামায়াত কর্মী সাইফুল্লাহ মো. মাসুম ঘটনার দুদিন পর হাসপাতালে মারা যান। একই সময় পল্টন মোড়ে নিহত হন ছাত্র মৈত্রীর খিলগাঁও থানা সাধারণ সম্পাদক রাসেল খান। ওই সহিংস ঘটনায় পল্টন ও আশপাশের এলাকাতেই আহত হন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পল্টন থানায় এক মামলা করেন পল্টন থানা জামায়াতের তৎকালীন আমির এ টি এম সিরাজুল হক। মামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল, তোফায়েল আহমেদ, মো. নাসিম, আব্দুর রাজ্জাক, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননসহ ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে হাজারের বেশি আসামি করা হয়।
আহত মাসুম মারা যাওয়ার পরে ৩ নভেম্বর আরেকটি সম্পূরক এজাহার দাখিল করা হয়। এতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে দুই শতাধিক লোককে আসামি করা হয়। অভিযোগটি দাখিল করেন নিহত মাসুমের ভাই মো. শামসুল আলম মাহবুব। অপর দিকে ছাত্র মৈত্রীর রাসেল খান নিহতের ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১০ জনকে আসামি করে পল্টন থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ঢাকা মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কামরুল আহসান। এ ঘটনায় পল্টন থানায় আরও তিনটি এবং শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। পল্টন থানায় করা ৬১ নম্বর মামলায় ২০০৭ সালের ১০ এপ্রিল ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।
যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়, তারা হলেন- আব্দুল জলিল, মোহাম্মদ নাসিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সাহারা খাতুন, হাজী সেলিম, এইচ বি এম ইকবাল, আব্দুস সালাম ওরফে সেলিম, সবুজ, আলী, মনা, রতন, আবুল, বাবু ওরফে নাজির আহম্মদ, জাকির ওরফে জাকির হোসেন, শফিকুল ইসলাম, সালাউদ্দিন খোকন, সুলতান মিয়া, আবুল কাশেম, আলমগীর ওরফে গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর, নওসের আলী, আব্দুল লতিফ ওরফে ক্ষ্যাপা, মো. জাকির হোসেন, শাহরিয়ার ওরফে সোহেল শাহরিয়ার, শাহাবুদ্দিন কিরন, জাহাঙ্গীর হায়দার চৌধুরী, আশরাফ হোসেন, টিটু, ওমর ফারুক, শেখ হাসিনা, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সিদ্দিক নাজমুল আলম, রাসেল, মজিবুর রহমান মাইজ্জা, বেলায়েত হোসেন, আবু সাঈদ, বশির আহম্মদ, কিরণ ওরফে আব্দুল মালেক, সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, জাহাঙ্গীর আলম, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী, মোস্তাকিম বিল্লাহ, মুকুল, রায় মোহন শীল ও সুমন।
চার্জশিটটি ২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরে পরোয়ানা মুলতবি করা হয়। ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১২ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে কামরুল আহসানের করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ৫ মে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়নি। এরপর উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করা হলে মামলাটি স্থগিত করা হয়।