শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : দুর্নীতি এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ডিবি পুলিশের হাতে আটক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর হালদারের ব্যাংক একাউন্টে পাওয়া গেছে ৫০ কেটি টাকা। গোয়েন্দারা নানান তথ্য পাচ্ছেন, তার নানান কর্মকান্ড এবং তার সিন্ডিকেট প্রধানের বিষয়েও।
এরই মাঝে আলোচনায় এসেছে , সিন্ডিকেট প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ পরিচালক (ডিডি) মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন এবং তার সিন্ডিকেট সদস্যদের নাম। দুইবছর আগে তিনি ঢাকায় ডিডি হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান করেই, দুর্নীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন । তার পরিবারের লোকজন বিদেশে বসবাস করার সুযোগে তিনি সরকারি বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করলেও বসবাস করেন খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বাসভবনে ।
অভিযোগ উঠেছে,মাউশির ডিডি মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিনের নামে-বেনামে দেশে- বিদেশে ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে মোটা অংকের ব্যালেন্স জমা হচ্ছে। বিদেশে দামি বাড়ি, গাড়ি এমনকি পরিবার পরিজনও থাকে । ইতোমধ্যে ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগ তার নানান অপকর্মের ফিরিস্তি অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে বলে জানা গেছে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত সময়ে শিক্ষামন্ত্রী অর্থাৎ তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে বাবা বলে সম্বোধন করে ডিডি আজিজ উদ্দিন। এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি দীর্ঘ সাত বছর কাটিয়েছেন মাউশির চট্টগ্রাম ডিডি হিসাবে । সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠে । হেন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি সেখানে।
শিক্ষামন্ত্রীর সাথে সম্বোধনের সখ্যতা কাজে লাগিয়ে একই পদে পোস্টিং বাগিয়ে নেন মাউশির অধিদপ্তরে।
মাউশিতে গড়ে তোলেন একটি ভয়ংকর সিন্ডিকেট। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তি, নিয়োগ, বদলি, পাঠদানের অনুমতি, পদোন্নতি, বিল, ভাউচার উত্তোলন, তদন্তের নামে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়মের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্য শুরু করেন।
ডিবির হাতে আটক চন্দ্র শেখরের সহায়তায় আজিজ উদ্দিন তার সিন্ডিকেট সদস্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলামসহ নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘুষের মহোৎসবে লিপ্ত হন। চন্দ্র শেখর হায়দারের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় সাতটি পর্বে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। নড়েচড়ে বসে গোয়েন্দা দপ্তর। আটক করা হয় চন্দ্র শেখর হালদারকে। গোয়েন্দারা তার ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পান ৫০কোটি টাকা। যা জব্দ করা হয়। সূত্রের দাবি ডিডি আজিজ উদ্দিনকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কোটি কোটি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাওয়া যাবে। একই অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট সদস্য শিক্ষা কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তরিকুল ইসলাম মাউশিতে যোগদানের আগে বাংলাদেশ পুলিশে চাকুরি করতেন । তিনি উপ পরিদর্শক (এসআই) অর্থাৎ দারোগা ছিলেন । দারোগা থাকাকালে তরিকুল ইসলামের নামে আলোচনা সমালোচনা হয় । কলেজেও শিক্ষকতা করেন তিনি । সেসময়ও নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয় তরিকুলকে নিয়ে ।
অভিযোগ উঠেছে, আজিজ উদ্দিনের সিন্ডিকেট সদস্য তরিকুলেও কয়েকশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে । চন্দ্র শেখর হালদার যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন তারাও কম কিসে এমনটা অভিজ্ঞ মহলের দাবি।
এদিকে ঢাকার খিলগাঁও সরকারি স্কুলের এক মহিলা প্রধান শিক্ষিকার বাসভবনের ছোট্ট একটি কোঠায় আজিজ উদ্দিনের বসবাস নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, ডিডি আজিজ উদ্দিন সরকারিভাবে প্রতিমাসে বাসা ভাড়া দেখিয়ে উত্তোলন করেন ৪০ হাজার টাকা। অথচ তিনি বসবাস করেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছার সরকারি বাসভবনের একটি রুমে। যেখানে তার থাকার কোন অনুমোদন নেই । সরকারি বাসভবনে ব্যাচেলর হিসাবে তিনি একাই বসবাস করেন। বিকালে বা সন্ধ্যায় আসেন। রাতে থেকে সকালে চলে যান। অফিসে অনিয়মিত থাকলেও চন্দ্র শেখরের মামলার তদবির নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আজিজ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা অর্থাৎ স্ত্রী সন্তানরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন । অভিযোগ উঠেছে আজিজ উদ্দিনের অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি আছে । মানি লন্ডারিং করে বাংলাদেশ থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকার সম্পদ পাচার করেছেন তিনি। খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ের হেডমাষ্টার মেহেরুন্নেছার সরকারি বাসভবনে বসবাসের অনুমোদন নেই তার। তারপরও থাকেন। আবার সরকারিভাবে বাড়িভাড়া তোলেন। একাই থাকেন লেডি হেড মাষ্টারের পাশের রুমে । এনিয়ে গুঞ্জন চলছে এলাকায়। ব্যাচেলর হয়ে কি করে বসবাস করেন শিক্ষিকার পাশের রুমে। এই নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক মহলে আলোচনা তুঙ্গে। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন্নেছা জানান, “স্যার (ডিডি আজিজ উদ্দিন) আপাতত আমার বাসভবনে বসবাস করছেন। মানবিক কারণে থাকার জায়গা দিয়েছি। স্যার শিঘ্রই বাসা ঠিক করে চলে যাবেন । এনিয়ে পত্র- পত্রিকায় লেখার কি প্রয়োজন আছে?” সিকিউরিটি গার্ড বাবুল জানান, “প্রতিদিন বিকালে স্যার একা আসেন। সকালে চলে যান। ম্যাডামের বাসায় থাকেন।” আমি আর কিছু জানি না।
ডিডি আজিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ এনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগকারীর পক্ষে দাবি করা হয়েছে, আজিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হলে চন্দ্র শেখর হালদারের চাইতেও বেশি অবৈধ টাকার সন্ধান মিলবে। যদিও ইতোমধ্যে তিনি দেশত্যাগের পায়তারা করছেন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানান, চন্দ্র শেখর হালদার কারাগারে আছেন। তদন্ত চলছে। আজিজ উদ্দিনের দেশত্যাগ পায়তারার বিষয়টি আমাদের কানে এসেছে। আমরা খোঁজ খবর রাখছি যেন পালাতে না পারে । ডিডি
আজিজ উদ্দিন বর্তমান ডিজিকে নিয়েও ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
এব্যাপারে মাউশির ডিডি আজিজ উদ্দিন বলেন,
প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।কেননা এ বিষয়ে আমার কোন দায়িত্ব ছিল না। আর চন্দ্র শেখর একজন মাউশিঅ এর সহকর্মী।অফিসিয়াল কাজ ব্যতিত এর বাইরে কোন সম্পর্ক নাই।