সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জাতিসংঘের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশিত হয়নি। যেসব দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার এবং মানবিক অধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে, সেটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিশেলের সর্বশেষ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। ওই রিপোর্টে উল্লিখিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের নাম দেখা যায়নি।
আগামী ৩১ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান হিসেবে চার বছর মেয়াদ পূর্ণ করবেন মিশেল। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন।রিপোর্টে গুম-খুনের মতো বিশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেসব দেশে বিরাজমান, সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আসেনি। মিশেলের রিপোর্টে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসব ক্ষেত্রে নানা যুগান্তকারী অর্জনকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
মিশেলের এই রিপোর্টে মূলত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে গত চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন ফুটে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশসহ যেসব দেশে মিশেল সফর করেছেন, তার একটা তালিকা উল্লেখ করেছেন। দেশগুলো হলো- বুরকিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পর মিশেলের এই রিপোর্টকে গুরুত্বসহকারে দেখছে ঢাকা। সফরকালে সরকার এবং আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মানবাধিকার বিষয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো তারা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই রিপোর্টে সেটিই প্রতিফলিত হয়েছে বলে উল্লেখ করছেন তারা।
মিশেল তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, তার এই মেয়াদকালে পৃথিবীর মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। বৈশ্বিক কোভিড মহামারির অপরিসীম নেতিবাচক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট- বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিন ইস্যু। তার রিপোর্টে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ড প্রথা বাতিল করার ক্ষেত্রে নানা উদ্যোগ, অগ্রগতি ও প্রতিবন্ধকতার তথ্য উঠে আসে। কোন কোন দেশে কী কী অগ্রগতি হয়েছে, সে কথাও এসেছে এই রিপোর্টে।
নিজের দেশ চিলিতে দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে পালনের অভিজ্ঞতার আলোকে মিশেল উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র পরিচালনা অনেক কঠিন কাজ। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবসময়ই নানা দাবি, সংকট ও সমস্যা থাকে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সব সংকটই অতিক্রম করা যায়।
মিশেল তার চার বছরের মেয়াদকালে যেসব দেশে গিয়েছেন, যেসব মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে বিষযে একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেন। রিপোর্টে আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মীদের সাহসের প্রশংসা করা হয়। মেক্সিকোর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মায়েদের শক্ত মনোবলের কথা বলা হয়। কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিংয়ের কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথাও বলা হয়। এছাড়াও আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে অভ্যন্তরীণ বসতিহারা মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া নাইজার, ভেনিজুয়েলা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া ও হাইতির বিভিন্ন বিষয় এতে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কথা বিশদভাবে উঠে আসে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে তার স্বপ্নভঙ্গের কথা জানতে পারেন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেন।
এতে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দায়ী করা হয় রিপোর্টে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধের জন্য নেপিদো কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানানো হয়।
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে সেটিও উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। ইউক্রেনের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অনুরোধ করা হয়। রিপোর্টে উভয় পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের নীতি মেনে চলার জন্যও অনুরোধ করা হয়।