বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৪ অপরাহ্ন
রেজাউল করিম রেজা:
সরকারি কর্মচারীদের আলীশান ভবন আর অভিজাত ফ্ল্যাট-এপার্টমেন্ট মিলিয়ে যেন আরেক বেগমপাড়ায় পরিনত হয়েছে ময়মনসিংহ নগরী। বিভাগের সরকারি দপ্তরের কেরানি,ক্যাশিয়ার, হাসপাতালের উচ্চমান সহকারী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা,পুলিশের এসআই,দুদকের কর্মচারী,পানি উন্নয়নের কর্মকর্তা,শিক্ষক,ভুমি কর্মকর্তা,সার্ভেয়ার এমনকি এমএলএসএস-পিওনরা পর্যন্ত আট তলা থেকে ১৬ তলা উচ্চতার বিশাল বিশাল ভবন গড়ে তুলেছেন। একাধিক কর্মচারী যৌথ মালিকানাতেও বানিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন বহুতল এপার্টমেন্ট। অনেকেই আলিশান ভবন নির্মান করছেন।
ময়মনসিংহ নগরীর গোলকিবাড়ি,আকুয়া মড়ল পাড়া(হাজীবাড়ি) আমলাপাড়া,মাসকান্দাসহ নগরীর অন্তত ৪৯টি আলীশান ভবন গড়ে তুলেছেন। নির্মান কাজ চলছে আরও শতাধিক। প্রতিদিনের কাগজে সংবাদ প্রকাশের পর জনসার্থে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন আবুল খায়ের নামের এক ব্যাক্তি। এবার সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুদক। এসব আলীশান ভবন ছাড়াও বিভাগের বিভিন্ন স্থানে তারা প্রায় সাড়ে পাঁচ‘শ একর জায়গা-জমিও কিনেছেন। তাদের বেগমদের নামেই দেওয়া রয়েছে সিংহভাগ সহায় সম্পদের মালিকানা। অনেকেই কানাডা,দুবাই ও ভারতে বাড়ি নির্মান করেছেন। ময়মনসিংহে আরেক ‘বেগম পাড়া’ নাম দিয়েছে কর্মচারীরাই।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ১৪৩ জন কর্মচারীর মধ্যে ৬৭ জনই আলাদীনের চেরাগ স্টাইলে কোটিপতি হয়েছেন। কারো কারো অর্থ-সম্পদের পরিমাণ শত কোটির ঘরও পেরিয়ে গেছে। দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর ও জেলা সদরে বছরের পর বছর কর্মরত এসব কর্মচারী আ’লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের সুপারিশে বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে দ্বীর্ঘদিন ধরে আছেন। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও নামে তদন্ত হয়ে রয়েই যায় একই কর্মস্থলে। সেসব বিষয়ে ময়মনসিংহ দুদকের নামমাত্র অনুসন্ধান হলেও দীর্ঘসময় ধরে ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের মধ্যে হাতে গোণা কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়সারা গোছের মামলা হলেও বেশিরভাগ রাঘববোয়ালই রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা সব মহলকে ম্যানেজ করে দিন দিনই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন। এসব লুটেরা, দুর্নীতিবাজ কর্মচারী আগে চুপিসারে অর্থবিত্ত গড়ে তুললেও এখন আর কোন কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না বরং তাদের অবৈধ উপায়ে অর্জিত বিত্ত বৈভবের শান-শওকত তারা অহঙ্কারের সাথেই প্রকাশ করছেন, সহায়-সম্পদও গড়ছেন অর্থ বাহাদুরীর পাল্লাপাল্লিতে।
ময়মনসিংহ নগরীর গোলকিবাড়ি আভিজাত্যে মোড়া দৃষ্টিনন্দন ১১ তলা “স্বপ্ন টাওয়ার” আকুয়া হাজীবাড়ি মোড়ে “ইঞ্জিনিয়ারিং টাওয়ার” “ইব্রাহিম টাওয়ার” “ইউলিটি টাওয়ার” নামে পরিচিতি আলীশান ৪টি ভবন নির্মাণ করে সবচেয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন শিক্ষক ও সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। এরমধ্যে কোটিপতি হিসাবে আলোচনায় রয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের (ক্যাশিয়ার) মোঃ এনামুল হক, ভুমি কর্মকর্তা আব্দুল গনি, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহীন আলম,পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামসহ ৩০ জন। এছাড়াও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ফারজানা পারভিন, সাবেক সহকারি পরিচালক নুরুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক সহকারি পরিচালক মো: জোয়াহের আলী মিয়া, উপজেলা যুব উন্নয়নের কর্মকর্তা নদ্দন কুমার দেবনাথ, উপজেলা যুব উন্নয়ন উপজেলা কর্মকর্তা মো: আবু জুলহাস, সাবেক যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ,ভালুকার গোলাম মোস্তফাসহ প্রায় ৬৭ জন কর্মচারী অবৈধ টাকায় আলিশান বাড়ি নির্মান করে বসবাস করছেন ময়মনসিংহ নগরীতে। এরই মধ্যে আরেক ঘটনায় আলোচনায় আসেন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আলমগীর হোসেন।
তিনি নিয়োগ বানিজ্য, জালিয়াতি ও স্টাফ কোয়ার্টার বরাদ্দে সরকারের শতকোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ও দুর্নীতির সাথে সরাসরি জড়িত বলে দুটি অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে। দুদক সূত্রে জানাগেছে, এছাড়াও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সাবেক জেলার বর্তমানে জেল সুপার চলতি দায়িত্বে আব্দুল্লাহ ইবনে তোফাজ্জল হোসেন খান তারও রয়েছে ৪টি বাড়ি। তিনি ময়মনসিংহ নগরীর জামতলা মোড়ে ৬ শতাংশ জমির উপর ৭ তলা একটি আলিশান ভবন নির্মান করছেন। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ৫ স্থানে জমি ক্রয় করেছেন। যার মুল্য অনুমান ৮ কোটি টাকা। কয়েকজনের নামে ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করছেন। মামলার আবেদনে ধারা উল্লেখ করা হয়েছে দন্ডবিধি ৪০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)। এর মধ্যে ২৪জন বিশ্বস্থ সহযোগিদের নিয়ে নগরীর গোলকিবাড়ি এলাকায় যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন ১১ তলা বিলাসবহুল বাড়ি। আধুনিক নকশা ও কারুকার্য খচিত বহুতল ভবনটি দেখার জন্য শহরের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনও ভিড় করেন সেখানে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্যাশিয়ার মোঃ এনামুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ ১৮ জন (কর্মচারী/কর্মকর্তা) মিলে ১১ তলার আলীশান ভবন নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ অঞ্চলের নদী খননের নামে সাগর চুরি দৈনিক “প্রতিদিনের কাগজ” পত্রিকায় শিরোনাম সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর কোটিপতিতে পরিনত হয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এছাড়াও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ জন উচ্চমান সহকারী, হিসাবরক্ষক, সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে ৯ জন এমনকি সমাজসেবা অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মচারীও রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ময়মনসিংহের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ারসহ পাঁচ কর্মকর্তার কাছেই শতকোটি টাকার সন্ধান মিলেছে। তারা নগরীর বিভিন্ন মহল্লা ছাড়াও খোদ রাজধানীতেও কোটি কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। এছাড়াও ভুমি কর্মকর্তা তাপস চন্দ্র রায় ভারতে তিনটি আলিশান বাড়ি নির্মান করেছেন। তাদেও পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করছেন দামি দামি গাড়ি। ভূমি কর্মকর্তা তাপস ও যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা করেন ইউরোপ-আমেরিকায়, তাদের সেকেন্ড হোম গড়েছেন কানাডায়- এসব খবর ঘুরে বেড়ায় কর্মচারীদের মুখে মুখে। উচ্চমান সহকারী পদবির একজন সাদেকুল ইসলামের সম্পত্তির বিবরণ উদঘাটন করে প্রতিদিনের কাগজ অনুসন্ধান টিমের সদস্যরাও অবাক হয়েছেন। ময়মনসিংহে চাকরিরত অবস্থায় একজন সরকারি কর্মচারী কিভাবে এতসব সম্পদের মালিক হয়েছেন-তার তত্বাবধায়নকারী কর্তাদের যেন তা নজরেও পড়েনি। প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়েই জানা গেল, উচ্চমান সহকারী সাদেকুল ইসলাম নগরীর আমলাপাড়া ও গোলকিবাড়ী এলাকায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ১১ তলা ভবন ও ৪৫ শতাংশ জমি কিনেছেন।
জমি ক্রয়ের দলিল নাম্বারগুলো হচ্ছে- ১২০, ২৩০৭, ৫৬৯, ৭০৪, ৭০০ ও ৫৪৫। তার দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আক্তারের জন্য রাজধানীর উত্তরায় ১০ নাম্বার সেক্টরে ৫ শতক জায়গার উপর ৯ তলা বিলাসবহুল বাড়ি কওে দিয়েছেন। তিনি উত্তরা, ধানমন্ডি, ময়মনসিংহের আমলাপাড়া, গোলকিবাড়িতে আরো ৭টি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। যার আনুমানিক খরচ ৫ কোটি টাকা। সাদেকুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী সোনিয়া আক্তার প্রতিবেদককে জানান,আমার স্বামী দুর্নীতি করে অবৈধভাবে এই টাকা অর্জন করেছেন। বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করায় (সাদেকুল ইসলাম) দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। দুদক এক কর্মকর্তারা জানান, ক্যাশিয়ার এনামুল হকের সম্পদের খোঁজ করতে গিয়েই ময়মনসিংহের ৬৭ জনের বিপুল সম্পদ থাকার বিষয়টি বেরিয়ে প্রকাশ্যে আসে এবং দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা তাদের স্ত্রী/বেগমদের নামে ৩৫টি আলিশান বিলাসবহুল বাড়ি নির্মান করেছেন। এবিষয়ে দুদক আরও খোঁজখবর নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি । দুদকের কর্মকর্তা আরও বলেন, অনুসন্ধানে বিপুল সম্পদ থাকার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর ময়মনসিংহ নগরীতে শতাধিক ফ্ল্যাট থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় দুদক। এর বাইরে কয়েক কর্মচারীর ব্যাংক হিসাবে শতকোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ক্যাশিয়ার এনামুল হক জানান, আমরা ১৮ জন মিলেমিশে ২০১১ সালে ৬ শতাংশ জমি ক্রয় করি। পরে ধীরে ধীরে ১১ তলা নির্মান করেছি। ভুমি কর্মকর্তা (নায়েব) আব্দুল গনি ও কয়েকজন যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ ১৮ জন মিলেমিশে নির্মান করা হয়েছে।
এখনও কাজ চলমান আছে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিকতার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের একাংশ স্বীকার করলেও, তাদের অনেকেই এই দুর্নীতির দায় ঢালাওভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ের এই দুর্নীতি অনেক ক্ষেত্রেই যে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ও যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়, তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। অন্যদিকে, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে ঘাটতির অন্যতম কারণ যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, তার দায়ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মূলত বারবার সরকারের শীর্ষ অবস্থান থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতির কথা বলা হলেও, তা যে শুধুফাঁকা বুলি-জনমনে গেঁথে যাওয়া এমন ধারণা থেকে উত্তরণের দায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে। আপনার কাছে শুনে হতভাগ হলাম। সামান্য কেরানীরা এত টাকার মালিক কেমনে হলেন। এছাড়াও বওলা ডিগ্রী কলেজ ফুলপুরের অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন খান। সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের মামা ভাই। অভিযোগ রয়েছে শরীফ আহমেদ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে সকল টাকা তাকে দিয়েছেন। বর্তমানে শরীফ আহমেদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু তার মামাতো ভাই অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন খানের ব্যাংকেই রয়ে গেছে শতকোটি টাকা। এছাড়াও মুসলিম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দীন ময়মনসিংহ জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মকবুল হোসেন,বিদ্যাময়ী সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম যৌথভাবে চারটি আলিশান ভবন নির্মাণ করেছেন। যার খরচ হয়েছে আনুমানিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবি ড.আজীম বিল্লাহ জয়নাল বলেন, এতদিন শোনা যেত কানাডায় বেগম পাড়া। কতদিন আগে দেখা গেল লন্ডনে বেগম পাড়া। এখন শুনি ময়মনসিংহ নগরীতে বেগমপাড়া? বেগম পাড়া বলতে মানুষ মনে করে এটা সংসদ সদস্যরা করেছেন। এখন শোনেছি সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের টাকায় গড়েছেন বেগমপাড়া! যাদের কারণে ময়মনসিংহে বেগম পাড়া নামটি এসেছে, তাদের শতকরা ৯০ ভাগ আমলা-কর্মচারী ও শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘বড় বড় রাঘব বোয়াল, কারা এরা খুঁজে বের করেন। আমরা যদি জানতে পারি, এদেশে যাদের জানার দায়িত্ব তারা কেন জানবে না। তারা অবশ্যই জানে। না জানলে তাদের বাদ দিয়ে যারা জানে তাদের দায়িত্ব দেন। এমন লোক বসান, যারা বসলে ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে।