শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

মদ বিক্রিতে ভ্যাট ফাঁকি ৭৩ লাখ

মদ বিক্রিতে ভ্যাট ফাঁকি ৭৩ লাখ

মদ বিক্রিতে ভ্যাট ফাঁকি ৭৩ লাখ

নিজস্ব প্রতিবেদক : চার বছরে ৭৩ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত বন্ড সুবিধার আওতায় লিকার, বিয়ার, হুইস্কি ও সিগারেট আমদানি করে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য অপরিশোধিত শুল্ক-কর আদায় এবং সংযোজিত ইনভেন্টরি ভ্যালু (নিজস্ব ব্যয়) ও মুনাফাসহ বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে মদ বা সিগারেট এনে দেশের বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় বিক্রি করতে পারে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের গঠিত নিরীক্ষা দল বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের অডিট সম্পন্ন করে। এরপর অডিট টিম প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার ৯৮২ টাকার অডিট আপত্তি উত্থাপন করে। চার বছরে বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রি ও উৎসে মূসকের বিপরীতে ৭৩ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেনি বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, পর্যটন কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে শুধু আমদানি মূল্যের ওপর শুল্ক-কর আদায় করলেও সংযোজিত ইনভেন্টরি ভ্যালু (নিজস্ব ব্যয়) ও মুনাফাসহ বিক্রয় মূল্যের ওপর ভ্যাট আদায় না করে রাজস্ব ক্ষতি করেছে।

ভ্যাট আদায়ের জন্য মূল্য সংযোজন কর আইন- ১৯৯১ এর ৫৫ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ২৬ জুন দাবিনামা জারি করে ঢাকা (উত্তর) কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এমনকি ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের শুনানিও নেওয়া হয়েছে। শুনানি ও নথিপত্র পর্যালোচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় হুইস্কি ও বিয়ারসহ মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে ভ্যাট ফাঁকির এসব তথ্য উদঘাটিত হয়।

অডিট টিমের পর্যালোচনা ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা নথি যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের বিভিন্ন বার ও রেস্তোরাঁয় মদ জাতীয় পণ্য বিক্রির বিপরীতে পাওনা ভ্যাটের পরিমাণ ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪০ টাকা। অন্যদিকে, শুধু ২০১২-১৩ অর্থবছরে উৎসে মূসকের পরিমাণ ২৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৫ টাকা। সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত তাদের কাছ থেকে ৭৩ লাখ সাত হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য।

যদিও সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষকে ভ্যাট পরিশোধের জন্য কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চলতি আগস্ট মাস থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় কিস্তিতে তাদের ওই টাকা পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভ্যাটের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের কাছে সবমিলিয়ে সুদ ব্যতীত ৭৩ লাখ সাত হাজার ৮৫৫ টাকার ভ্যাট আদায়যোগ্য। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের সুদ মওকুফ করে কিস্তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তারপরও পাওনা না পাওয়া দুঃখজনক।

এ বিষয়ে পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ ও বিপণন) মো. জিয়াউল হক হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অবগত নন বলে জানান। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলাপ করে পরে জানানো হবে বলেন।

উল্লেখ্য, দেশে মদ বা হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে ৩৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কসহ ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি, অগ্রিম আয়কর বা আগাম কর (এটি), ল্যান্ডিং চার্জ, ইন্স্যুরেন্স, মূল্য সংযোজন কর- সবমিলিয়ে ৪৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। হুইস্কি বা ভদকার মতো পানীয় আমদানিতে শুল্কের হার ৬০০ শতাংশের বেশি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |