শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

দীর্ঘ সময় মানুষকে ভোটাধিকার ছাড়া রাখলে পরিণতি ভালো হবে না: কাদের সিদ্দিকী

দীর্ঘ সময় মানুষকে ভোটাধিকার ছাড়া রাখলে পরিণতি ভালো হবে না: কাদের সিদ্দিকী

অনলাইন ডেস্ক:  দীর্ঘ সময় মানুষকে ভোটাধিকার ছাড়া রাখলে পরিণতি খুব ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।

তিনি বলেছেন, “এই দেশের মানুষ চায় গণতন্ত্র, চায় ভোটাধিকার। শেখ হাসিনার এই রকম ন্যাক্কারজনক পতনের প্রধান কারণ- তিনি মানুষের ভোটাধিকারকে সম্মান করেন নাই, পরপর বেশ কয়েকবার মানুষকে সঠিকভাবে ভোট দিতে দেন নাই। যার ফলে এটা হয়েছে। “দীর্ঘ সময় মানুষকে ভোটাধিকার ছাড়া রাখলে এখন যারা আছে তাদের পরিণতিও খুব ভালো হবে না, এটা আমার বিশ্বাস।” রোববার সকালে টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাজার জিয়ারত শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, “অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ একটা মারাত্মক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু অতীতকে বর্জন করে-অস্বীকার করে, এই পরিবর্তন যদি কেউ করতে চায়, তাহলে আহাম্মকের স্বর্গেই বাস করছে। দুদিন পরে তাদেরকেও এ রকম হতে হবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, “মানুষ খুব আশা করেছিল কিন্তু গত এই তিন মাসে মানুষের আশার মতো ফল পাই নাই। সাধারণ মানুষের যে উপার্জন তারা বাজারে যেতে পারছে না, স্ত্রী-পুত্র পরিবার নিয়ে ভালো ভাবে খেতে পারছে না।”

কাদের সিদ্দিকী বলেন, “যারা সরকার চালাচ্ছে তাদেরকে অনুরোধ করবো তারা যেন দেশের মানুষের কথা বিবেচনা করেন। ক্ষমতা কারও জন্য চিরস্থায়ী নয়। যারা ছিলেন তাদের জন্য যেমন নয় আজকে যারা এসেছেন তাদের জন্যও চিরস্থায়ী নয়।

“এজন্য দেশের মানুষের কথা চিন্তা করুন। দেশের মানুষকে সম্মান করুন। অতীতকে সম্মান করুন। যাদের এই দেশের জন্য অবদান আছে তাদের যথাযথ যোগ্য সম্মান দিয়ে রাষ্ট্র চালাবার চেষ্টা করুন।”

‘বীর উত্তম’ খেতাব পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, “যে মানুষটির জন্ম না হলে পাকিস্তান হতো না, পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হতো না। বাংলাদেশ না হলে আমরা আজকে বাংলাদেশের নাগরিকও হতাম না। সেই মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অনাদর দেখে খুব কষ্ট লাগে, খুব খারাপ লাগে।”

এ সময় সখীপুর উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সখীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র সানোয়ার হোসেন সজীবসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি

এদিকে টাঙ্গাইলে নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে ভাসানীর মাজারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার, ভাসানী পরিবারের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া করা হয়।

শ্রদ্ধার্ঘ জানাতে সকাল থেকেই তার মাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের ঢল নামে। পরে মওলানা ভাসানীর অনুসারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন পর্যায়ক্রমে তার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে এবং মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাতদিনব্যাপী ‘ভাসানী মেলা’ও চলছে।

এছাড়াও সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় টেকনিক্যাল কলেজ, মওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে আবদুল হামিদ খান ভাসানীর জন্ম। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও তিনি তার জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। সন্তোষের মাটিতেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।

কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দীর্ঘদিন তৎকালীন বাংলা-আসাম প্রদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি ছিলেন। তার উদ্যোগে ১৯৫৭ সালে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন বাংলাদেশের রাজনীতিতে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি সর্বদলীয় ওয়ার কাউন্সিলের উপদেষ্টা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তার সর্বশেষ কীর্তি ছিল- বাঁধ দিয়ে ভারতের একতরফা পানি অপসারণের প্রতিবাদে ফারাক্কা লং মার্চ।

১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মওলানা ভাসানী।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2025 Protidiner Kagoj |