Noman Group Advertisement

এবার মাউশির বিরুদ্ধে মামলা করল ইব্রাহিম কবির !

নিজস্ব সংবাদদাতা , প্রতিদিনের কাগজ

প্রকাশিত: ১৩ মে, ২০২৫, ০৭:৩৫ পিএম

ফাইল ছবি

ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কিত শিক্ষক ইব্রাহিম কবির বদলি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছেন৷ এতদিন  অসুস্থতা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে মিথ্যা  প্রচারনা চালিয়ে নির্ধারিত সময়ে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করেনি ইব্রাহিম কবির। শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, বিলম্বে যোগদান জনিত অপরাধ  ঢাকতে কৌশলে  আদালতের শরনাপন্ন হন বিতর্কিত এই শিক্ষক ৷ 

বিতর্কিত এই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে সরব ফেনী পাইলটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা ৷ ইব্রাহিম কবির কর্তৃক অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে  গত ১৩ই এপ্রিল মানববন্ধনের ডাক দেন ফেনী পাইলটের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে ইব্রাহিম কবিরের ক্রস চিহ্নিত ছবি সম্বলিত পোষ্টার লাগায় শিক্ষার্থীরা। 

কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার আশ্বাসে প্রধানশিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন প্রত্যাহার করে নেয় এবং পরে প্রধানশিক্ষক, জেলা প্রশাসন ও মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষার্থীরা৷ শিক্ষকরাও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রধানশিক্ষক বরাবর।  সদ্য অবসরে যাওয়া ফেনী পাইলটের প্রধানশিক্ষক ফৈরদৌস আরা বলেন - তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি।

বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই সহকর্মীর এমন আচরনে ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত। একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন - ইব্রাহিম কবির মানসিক ভাবে অসুস্থ। তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তিনি মিথ্যার উপর বসবাস করেন এবং মিথ্যাকেই সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন৷ সহকর্মীদের হয়রানি ও অপদস্ত করা তার নেশা। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন৷ 

স্ত্রীকে দিয়ে প্রধানশিক্ষক ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যার হুমকি জনিত জিডির বিষয়টি যে একদমই মিথ্যা, তা অকপটে স্বীকারও করেন ইব্রাহিম কবির৷  মাঝে মাঝে শত্রুকে ঘায়েল করতে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয় বলে একাধিক সহকর্মীকে জাহির করে বেড়ান ইব্রাহিম কবির।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, সহকর্মীদের হয়রানি করতে থেমে নেই ইব্রাহিম কবির৷ ফেনীতে বসেই বর্তমান কর্মস্থলের পাশাপাশি  পূর্বের কর্মস্থল আলবার্ট ভিক্টোরিয়া যতীন্দ্র মোহন গভ. গার্লস হাই স্কুলের সাবেক প্রধানশিক্ষক আনোয়ারুল হক, সিনিয়র শিক্ষক তৌফিকুল ইসলাম তালুকদার, শামসুল আলম সহ একাধিক শিক্ষককের বিরুদ্ধে দুদক, জেলা প্রশাসন, সচিব ও শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দফায় দফায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেই যাচ্ছেন৷ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এভিজেএম স্কুলের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন- ইব্রাহিম কবিরের বিষয়ে মাউশির উচিত কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া৷ তার অত্যাচারে পেশাগত জীবনে বারবার হয়রানির স্বীকার হয়েছি। বিচার না হওয়ায় মাউশির উদাসীনতায় সে বারবার এমন কাজ করার উৎসাহ পাচ্ছে। 

এতকিছুর পরেও অনৈতিক কর্মকান্ড করা  থেমে নেই বিতর্কিত শিক্ষক ইব্রাহিম কবিরের৷ তথ্য গোপন করে অনৈতিক ভাবে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় ভূগোল বিষয়ে প্রধানপরীক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন। বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী এটা গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য  অপরাধ। ইব্রাহিম কবিরের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন জানতে চাইলে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক রুনা নাসরিন বলেন, বিষয়টি আমরা পরে জানতে পেরেছি। নিয়ম অনুয়ায়ী তাকে দায়ীত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তার তথ্য গোপন করার বিষয়টি আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে তার প্রোফাইলে সাবমিট করে দেবো। 

ফেনী জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে ইতোমধ্যে ইব্রাহিম কবিরের এলপিসি সহ বদলি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি বানিয়াচং উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে প্রেরন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা একাউন্ট এন্ড ফিন্যান্স অফিসার, এটিএম মাহমুদুল করিম জানান, আমরা এলপিসি পাঠিয়েছিলাম। উনি নতুন কর্মস্থলে যোগদান না করায় আমাদের কাছে এটা রিটার্ন এসেছে। এখন আমাদের কাছেই আছে।

গত ২রা মার্চ মাউশির এক আদেশে বিতর্কিত শিক্ষক ইব্রাহিম কবিরকে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার লোকনাথ রমন বিহারী সরকারি  উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়৷ ১০ই মার্চের মধ্যে যোগদান করার কথা থাকলেও অসুস্থতার কথা বলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন ইব্রাহিম কবির ৷ অটো বিমুক্তির দীর্ঘ ১ মাস পর তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বদলি আদেশ চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন৷ নিয়মানুযায়ী  আদেশে সংক্ষুব্ধ যে কোন ব্যক্তিই অটো বিমুক্তির পূর্বেই আদালতের শরনাপন্ন হওয়ার নিয়ম থাকলেও ইব্রাহিম কবির অটো বিমুক্তির ১ মাস পর আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির আইন কর্মকর্তা আল আমিন সরকার জানান, আদালত থেকে আমাদের কাছে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ জানাতে বলা হয়েছিল, আমরা তার জবাব নির্ধারীত সময়ের মধ্যেই সাবমিট করেছি। আগামী তারিখে জানা যাবে আদালত কি মামলাটি রাখা হবে নাকি বাতিল করা হবে। 

Link copied!