Noman Group Advertisement

মাঝারি ও ছোট গরুর সংকট, বড় গরু কিনতে অনাগ্রহ ক্রেতাদের

জাহাঙ্গীর আলম তপু , সহ-সম্পাদক

প্রকাশিত: ০৬ জুন, ২০২৫, ১০:৪০ পিএম

রাত পোহালেই ঈদুল আজহা। রাজধানী ঢাকা জুড়ে চলছে কোরবানির শেষ প্রস্তুতি। আর সেই প্রস্তুতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—কোরবানির পশু কেনা। শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী, তেজগাঁও, শাহজাহানপুর, শনিরআখড়া, বাসাবোসহ বিভিন্ন হাটে ছিল ক্রেতার উপচে পড়া ভিড়। তবে হাটে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন অনেকেই। যেসব গরু খোঁজ করছিলেন, সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে না।

ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা যতটা, সেই তুলনায় জোগান একেবারেই কম। সকাল গড়াতেই এসব সাইজের গরু রাখার নির্ধারিত জায়গাগুলো অনেক হাটেই খালি হয়ে গেছে। ফলে হাটে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন অনেক ক্রেতা। যেসব গরু রয়েছে, সেগুলোর দাম নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বাজেটের একটু বেশি হলেও পছন্দসই পশু পেলে কিনে নিচ্ছেন অনেকেই।

গাবতলী হাটে সকাল থেকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট ও মাঝারি গরুর স্টলগুলো একে একে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সকালেই অধিকাংশ গরু বিক্রি হয়ে গেছে। নতুন করে কিছু গরু এলেও দাম বেশি, ফলে সব শ্রেণির ক্রেতার নাগালে নেই। তেজগাঁও হাটে গরু কিনতে আসা মগবাজারের নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাজেট ৯০ হাজার টাকা। এই বাজেটে গত বছর মাঝারি সাইজের ভালো গরু পেয়েছিলাম। এবার শাহজাহানপুর হাটে খুঁজে না পেয়ে গাবতলীতে এসেছি, এখানেও ছোট ও মাঝারি গরু নেই বললেই চলে।’

রামপুরা থেকে আসা ইমদাদুল হক বলেন, ‘বাজারে বড় গরুর অভাব নেই, কিন্তু আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের পক্ষে এগুলো কেনা সম্ভব নয়। যেটা কিনতে এসেছি সেটাই পাচ্ছি না। হাটে বড় গরুর উপস্থিতি বেশি হলেও সেই গরুতে নেই সাধারণ ক্রেতার আগ্রহ। অনেক গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা, কোথাও কোথাও তারও বেশি। কিন্তু এই দামে আগ্রহী ক্রেতা খুবই কম।

ময়মনসিংহ থেকে গরু নিয়ে আসা খামারি আবু রায়হান বলেন, ‘তিন বছর ধরে বড় গরুটা লালন-পালন করেছি। খাওয়া, চিকিৎসা, সব মিলে অনেক খরচ হয়েছে। এখন হাটে এনে যদি দাম না পাই, তাহলে ভবিষ্যতে এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তবে শেষ সময়ে এসে বিক্রেতাদের অনেকেই কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন শেষ মুহূর্তের সম্ভাব্য ভালো দরদামের আশায়। হাটের চারদিকে চলছে দরদাম, হাকডাক আর চেনা সেই দড়ি টানাটানি। কেউ গরু পেয়ে যাচ্ছেন নিজের বাজেটের একটু কম বা বেশি দামে, আবার কেউ পছন্দসই গরু না পেয়ে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। কিছু ক্রেতাকে দেখা গেছে এক হাট থেকে আরেক হাটে ছুটে বেড়াতে, গরুর খোঁজে।

 

বিক্রেতাদের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও গরু আসছে রাজধানীর হাটগুলোতে। তবে যে হারে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় জোগান একেবারেই কম। হাটে এখনও এক হাটের গরু অন্য হাটে ট্রাকে করে পাঠানো হচ্ছে, যাতে চাহিদা অনুযায়ী জোগান নিশ্চিত করা যায়।

তেজগাঁও হাটের এক ক্রেতা বলেন, ‘ভেবেছিলাম আরও একটু ঘুরে দেখব। কিন্তু এখন যা অবস্থা, যা পাচ্ছি তাই নিয়েই ফিরছি।’শেষ মুহূর্তে ‘যা পাচ্ছি তাই’ মানসিকতা যেহেতু ঈদ একেবারে দোরগোড়ায়, তাই ক্রেতাদের মধ্যে আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। যারা পছন্দের গরু পেয়ে যাচ্ছেন, তারা দাম কিছুটা বেশি হলেও কিনে নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই পরিস্থিতিতে দর কষাকষি করেও খুব একটা লাভ হচ্ছে না। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বড় গরুতে খরচ বেশি হওয়ায় কম দামে বিক্রি করলে লোকসান হবেই। তবু বিক্রি না হলে আরও বেশি ক্ষতির শঙ্কা—এই দোটানায় রয়েছেন অনেকেই।

Link copied!