Noman Group Advertisement

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা কেন অধিকারহীন?

মোঃ আল শাহারিয়া সুইট , ডিআইইউ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম

বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বহু প্রচলিত ধারণা আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোনা যায় প্রাইভেট মানেই টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট। বাস্তবে কিন্তু দৃশ্যপট ভিন্ন। মধ্যবিত্ত পরিবারের অসংখ্য শিক্ষার্থী বাবার কষ্টার্জিত টাকায় ভর্তি হচ্ছে এখানে। তারা আশা করে মানসম্মত শিক্ষা, আধুনিক পাঠদান এবং ন্যায্য অধিকার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নিজেরাই যখন জানে না তাদের প্রকৃত অধিকার কী, তখন সে অধিকার আদায় করবেই বা কীভাবে? 

২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন শিক্ষার্থীদের অধিকার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো, এবং মালিকপক্ষের দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করেছে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ নীতিমালা সম্পর্কে অজ্ঞ। ফলাফল অন্যায় দেখলেও প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ, কিছু বললেই ‘ছাত্রত্ব হারানোর ভয়’ এসে দাঁড়ায় সামনে। 

এখানে শিক্ষা রাজনীতির চিত্রও খুব আলাদা নয়। ক্ষমতাসীন দলগুলোর শাখা সংগঠন গুলো  শিক্ষার্থীদের জন্য বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয় না। সংগঠনগুলো মাঠ থেকে অফিস সব দখলে রাখলেও, সাধারণ শিক্ষার্থীর সমস্যায় পাশে দাঁড়ানো খুবই বিরল। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি এক শিক্ষার্থীকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় কোনো সংগঠন এগিয়ে আসেনি। অথচ শিক্ষার্থীর অধিকার রক্ষার জন্যই তো এসব সংগঠনের অস্তিত্ব থাকার কথা। 

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্ট কাউন্সিল রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, আর সেই প্রতিনিধি সরাসরি শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলে। ফলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা, দাবি, অধিকার বা স্বার্থের বিষয়ে স্পষ্ট জবাবদিহিতা তৈরি হয়। আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এমন কাউন্সিল থাকত, তবে শিক্ষার্থীরা অন্তত নিজের কণ্ঠস্বর প্রকাশ করতে পারত। 

কিন্তু বাস্তবতা হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মালিকপক্ষের ইচ্ছার কাছে বন্দি। আইন থাকলেও তা অনেক সময় প্রয়োগ হয় না। যারা টাকার প্রাচুর্যে প্রভাবশালী, তাদের ইচ্ছার বাইরে যেন কিছুই সম্ভব নয়। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা চুপচাপ মানিয়ে নেয়। কেউ কথা বললে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয় থাকে। যেন শিক্ষার্থীদের ভূমিকা শুধু ক্লাস করা, পরীক্ষা দেওয়া আর হ্যাঁ তে হ্যাঁ ধরা এর বাইরে কিছু নয়। 

বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছোটখাটো নির্বাচন বা প্রতিনিধি বাছাই হয়, তা অনেকটা আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকে। প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীদের কোনো শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয় না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় মানেই তো জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি শেখা। শিক্ষার্থীদের নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জায়গা তৈরি না হলে তারা কেবল ভুক্তভোগী হয়েই থাকবে। 

একটি বিষয় এখানে স্পষ্ট শিক্ষার্থীরা যতদিন নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানবে না, ততদিন তারা বারবার বঞ্চিত হবে। আইন আছে, কিন্তু সেটি পড়া ও বোঝা জরুরি। ২০১০ সালের নীতিমালা প্রতিটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অবশ্যপাঠ্য হওয়া উচিত। 

সোজা কথা হলো এখানে কেউ কাউকে তোয়াক্কা করে না। শিক্ষার্থীরা যদি সচেতন না হয়, তবে পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমাদের উচিত নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চুপচাপ মানিয়ে নেওয়া নয়, বরং নীতিমালা জানা, বোঝা এবং প্রয়োগের দাবি তোলা। অধিকার আদায় করতে হলে প্রথম শর্ত হলো অধিকার জানা। 

যতদিন শিক্ষার্থীরা অজ্ঞ থাকবে, ততদিন তাদের কণ্ঠস্বর চাপা পড়েই যাবে। কিন্তু যদি প্রতিটি শিক্ষার্থী ২০১০ সালের নীতিমালা পড়ে, বোঝে এবং সে অনুযায়ী প্রশ্ন তোলে, তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের চিত্র একদিন বদলাতে বাধ্য হবে।

Link copied!