নিঝুমদ্বীপে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বিএনপির সভাপতিসহ ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

মামুন রাফী , নোয়াখালী জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের সমুদ্র সৈকত থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগে বিএনপির সাবেক সভাপতি সহ ৬ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় আরও ৪–৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) জাহাজমারা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন, নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাবেক সহ সভাপতি মো. শাহেদ উদ্দিন, নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এনায়েত হোসেন, হাতিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য রাসেল,  নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী আব্দুর রহিম ও সমর্থক আফছার উদ্দিন।

এজহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা নিঝুমদ্বীপ নামার বাজারের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে অবস্থিত সরকারি সমুদ্র সৈকত এলাকায় পূর্বপরিকল্পিতভাবে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে মিলিত হয়। পরবর্তীতে তারা সরকারি সি-বিচ এলাকায় জোরপূর্বক প্রবেশ করে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে থাকে।

এ সময় ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বালু উত্তোলনে বাধা দিলে আসামিরা তাকে গালাগাল করে এবং খুন-জখমের হুমকি দিয়ে তার দিকে তেড়ে আসে। তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করার জন্য হুমকি প্রদান করে। পরে হুমায়ুন কবির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে এবং পুনরায় আসামিদের অবৈধ কার্যক্রমে বাধা প্রদান করে। কিন্তু আসামিরা তাতে কর্ণপাত না করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখে। তাদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে সরকারের প্রায় ১০ (দশ) লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) বিএনপি মনোনীত এমপি প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেনের বন্দোবস্ত জমিতে চাষাবাদের জন্য বালু অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ পান নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী আব্দুর রহিম। তিনি নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেনের ড্রেজার মেশিন ভাড়া নিয়ে বালু উত্তোলন করেন। বালু উত্তোলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। তারপর প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করেন এবং সরঞ্জাম জব্দ করেন।

এ বিষয়ে সাবেক উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার বন্দোবস্ত জমিতে ধান হয়। কিন্তু জোয়ারে বালু আসায় ধান চাষ করতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই বালু উত্তোলনের জন্য আব্দুর রহিমকে দায়িত্ব দিয়েছি। কে বা কারা গুজব বানিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেছে এবং প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধ করেছে। আমি কি আমার জমি চাষ করতে পারব না? 

এদিকে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করেও আসামির তালিকায় নাম ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাতিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য রাসেল। তিনি বলেন, বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করে আমি ইউএনও স্যারসহ সবাইকে জানিয়েছি এবং তার রেকর্ড আমার কাছে আছে। কিন্তু আমাকেই আসামি করা হয়েছে। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলি অথচ নিজেদের মধ্যেই বৈষম্য। প্রতিবাদ করে যদি আসামি হতে হয় তাহলে এর থেকে মরে যাওয়া ভালো।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী আব্দুর রহিম বলেন, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম।  বর্তমানে মানুষের বাড়ি বা পুকুর ভরাটের কাজ করছি। শাখাওয়াত ভাই আমাকে তার জমির বালু উত্তোলনের জন্য বলেছেন। আমি শ্রমের বিনিময়ে টাকা পাই। কিন্তু এখন আমাকে আসামি করা হয়েছে। এটা আমার জন্য খুবই কষ্টের।

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মানহানী করার জন্য ৬ জন নাম উল্লেখ ও  ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। মিথ্যা নাম দেওয়ায় মামলার বাদির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।

এদিকে মামলার বাদী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করেছি কারা বালু উত্তোলন করছে। মানুষ যাদের নাম বলেছে আমি তাদের নামে অভিযোগ দায়ের করেছি। এখানে অনেকেই ছিলেন না যাদের আসামি করা হয়েছে। আশা করি তাদের নাম তদন্তে বাদ যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সাবেক বিএনপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও আব্দুর রহিম  নিঝুম দ্বীপ সী-বীচ এলাকা থেকে অবৈধভাবে ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করেছে। যা দ্বীপের পরিবেশ ও উপকূলীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। নিঝুম দ্বীপের মতো সংবেদনশীল এলাকায় এ ধরনের পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা জরুরি।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা বলেন, মামলা দায়ের হয়েছে। এজহারভুক্ত আসামি ৬ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। 

Link copied!