স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টরা দীর্ঘদিন ধরে ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অভিযোগ, সমমানের ডিপ্লোমাধারী অন্যান্য পেশাজীবীরা ইতোমধ্যে ১০ম গ্রেডের মর্যাদা পেলেও তাদের দাবি বহু বছর ধরে উপেক্ষিত হচ্ছে।
"মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট ১০ম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ" জানায়, স্বাস্থ্যসেবার মূল কাঠামো একটি সমন্বিত টিমওয়ার্ক, যেখানে চিকিৎসক ও নার্সদের পাশাপাশি টেকনোলজিস্ট এবং ফার্মাসিস্টরা রোগ নির্ণয়, প্যাথলজি, রেডিওলজি, ইমেজিংসহ সব ধরনের ডায়াগনস্টিক সেবা এবং হাসপাতালের ওষুধ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো মহামারীতে এই দুই পেশার সদস্যরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন।
সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা ১৯৯৪ সালে, ডিপ্লোমা নার্সরা ২০১১ সালে এবং ডিপ্লোমা কৃষিবিদরা ২০১৮ সালে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হলেও একই যোগ্যতার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা বছরের পর বছর বঞ্চিত হয়ে আসছেন। ১৯৮৯ সাল থেকে দাবি জানানো হলেও এ বিষয়ে বাস্তব কোনো অগ্রগতি হয়নি।
২০২৪ ও ২০২৫ সালে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে সুপারিশ পাঠায়। সর্বশেষ ১৬ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফাইল পাঠানো হলেও তা এখনো অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
দাবি আদায়ে পরিষদের পক্ষ থেকে সারা দেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৬–২৯ নভেম্বর স্মারকলিপি প্রদান, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ চলছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ধাপে ধাপে কর্মবিরতি ও শাট-ডাউনসহ কঠোর কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০ নভেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মোঃ কামরুজ্জামান ফারুক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং)। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মোঃ মাহবুবুল আলম শাহীন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব)।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফার্মাসিস্ট স্বপন কুমার সেন, সাইদ তালুকদার, অজিত চন্দ্র; ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান; ল্যাব টেকনোলজিস্ট সোহেল রানা এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হান্নান, বিপুল, আপেলসহ বহু সদস্য।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে। মানবসেবার স্বার্থে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা সীমিত আকারে চালু থাকলেও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলে জানান তারা। জনগণের সাময়িক ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেও ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন আন্দোলনকারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :