শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩০ পূর্বাহ্ন
কুবি সংবাদদাতা:
এবারের অমর একুশে বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হৃদয় রেজওয়ানের লেখা উপন্যাস “মহারাজাধিরাজ” । উপকথা প্রকাশনার ১৭৭ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। এ উপন্যাসে গল্পের বিস্তৃতি “কৈলান” নামের এক গ্রাম, গ্রামের জনজীবন ও তাদের অস্তিত্বের টানাপড়েন ও জীবনঘনিষ্ঠ নানা সমস্যার প্রতিচিত্র নিয়ে।
গল্পের শুরুতেই কৈলান গ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী রুপমতি নদীর যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা যে কোন পাঠকের মনে এক প্রশান্তিকর আবেশের সৃষ্টি করে তাকে গ্রামমুখী হতে অনুপ্রাণিত করবে। গ্রামের নিস্তব্ধ দুপুর, বিস্তৃত মেঠোপথ, অকৃপণ সবুজের সমারোহ,বাতাসে ভেসে আসা ফসলের ঘ্রাণ, আর রুপমতির স্বর্ণকিরণে ঝিকিমিকি ঔজ্জ্বল্য বাতাসের দমকা বেগ, নদীর টলমল স্রোত এই সব উপাদান গ্রামের মানুষের জীবন ও সরলতাকে ইঙ্গিত করে।
এছাড়া গল্পের ১২ অধ্যায়ে গ্রামের মঙ্গল উৎসবের বর্ণনা- কোলাহল, নৌকাবাইচ, এ সবকিছু আমাদের চিরাচরিত গ্রাম বাংলার জীবনঘনিষ্ঠ রুপ। গ্রামের এই মনোরম পরিবেশের মধ্যেই সাধারণ গ্রামের মানুষের স্বভাববিপরীত এক চরিত্রের সাথে আমরা পরিচিত হই। এই যুবক বেশ, ভাবুক ও বিচক্ষণ, পড়াশোনায় আগ্রহী। যুবকটির এই বিপরীত স্বভাবের জন্যই গ্রামের মানুষের সাথে তার রয়েছে দূরত্ব। সে সবার সাথে সহজভাবে মিশতে চায় কিন্ত গ্রামের মানুষের কাছে সে দুর্বোধ্য।
সেই গ্রামের এই সরল মানুষগুলোর এক আস্থার জায়গা তাদের গ্রাম সর্দার ও এক অদৃষ্ট মহারাজাধিরাজ। বহুকাল ধরে যাকে নৈবেদ্য দিয়ে সন্তুষ্ট করে আসছে গ্রামবাসী। এই গ্রামের মানুষের সহজসরল জীবনযাত্রার পেছনে রয়েছে গ্রামের মানুষের শিক্ষা ও ধর্ম-কর্মে অসক্রিয়তা। তাই গ্রামের মানুষের রোগ, জরা-জীর্ণতা, সঙ্কট সব কিছুর সমাধানে তাদের নির্ভরতা গ্রামের একমাত্র পণ্ডিত পরিবারের উপর। এ পরিবারের কর্তা তীর্থকমল। তার তিন ছেলের (মনকমল, প্রানকমল, জ্ঞানকমল) চরিত্রে রয়েছে ভিন্নতা।
আমাদের এই গল্পের পূর্বপরিচিত ছেলেটি হল জ্ঞানকমল। সে কোন এক আজব দেশের কথা, আজব জীবনযাত্রার কথা বলত। রাষ্ট্রব্যাবস্থা, অর্থ- ব্যবস্থা, মানবাধিকার, সুশাসন এই সব শব্দ সে ব্যবহার করত যা গ্রামের এই সরল মানুষের কাছে দুর্বোধ্য। গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নানা দুর্যোগের কারণে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। পূর্বে এর প্রতিকারের জন্য গ্রামবাসী মহারাজাধিরাজের কাছে নৈবেদ্য দিত, যাতে তুষ্ট হয়ে তিনি সমস্যার সমাধান করতেন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের এই দুর্যোগ যেন নৈবেদ্যতে দূর হচ্ছে না। গ্রামের মানুষের মনে শঙ্কা তবে কি মহারাজাধিরাজ নৈবেদ্যতে সন্তুষ্ট নয়? তিনি কি তাদের পরিত্রান দিবেন না? তার বার্তাবাহকরা কী তাকে গ্রামের মানুষের সমস্যার কথা ঠিকমতো বলছেন না? মানুষের মুখের ছাপে এই প্রশ্নগুলো যেন পরতে পারেন গ্রাম সর্দার। তাই তীর্থকমলের সাথে আলোচনা করে সমাবেশ ডাকলেন।
সহজসরল মানুষগুলোকে বোঝান গেলেও, জ্ঞানকমল দিল ভিন্ন মত- গ্রামবাসীদের নিয়ে নিজে দেখা করতে চায় মহারাজাধিরাজের সাথে। কিন্তু সরল মানুষগুলোর মনে দ্বিধা থাকলেও সায় নেই এতে। আর এই মাধ্যমেই রহস্যময়তা ও গল্পের ক্লাইমেক্স এর দিকে উপন্যাসটি এগিয়ে যায়। উল্লেখ্য, হৃদয় রেজওয়ান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তার অন্যান্য লিখনি “নিভৃত চাঁদের গোধূলি গল্প” (২০২১) ; “আঁধারবৃক্ষ” (২০২২)।