রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন

ছাগলকান্ডের পর এবার আলোচনায় ফায়ার সার্ভিসের ডিডি জসিম উদ্দিন

ছাগলকান্ডের পর এবার আলোচনায় ফায়ার সার্ভিসের ডিডি জসিম উদ্দিন

ফায়ার র্সাভসিরে ডডিি জসমি উদ্দনি

সায়লা শারমিন: ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) জসিম উদ্দীন। নিজ জেলা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসভায়। সেখানে দুটি ৬ তলা বাড়ি, ১০০ একরের বেশি জমি ও মার্কেটসহ বেশকিছু সম্পদের মালিকানা রয়েছে তার। যা তিনি নিজের নামে ছাড়াও স্ত্রী, ভাই, শুশুর ও শ্যালক ও তার পরিবারের নামে গড়েছেন। ফায়ার সার্ভিসে নিয়োগ বাণিজ্য,বদলি করে প্রায় শত কোটি টাকার বনে গেছেন। । দুটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হচ্ছেন।

তিনি ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করে শত কোটি টাকার মালিক কীভাবে হলেন? এমন আলাদীনের আশ্চার্য প্রদীপের সন্ধান ছাড়া এতো সম্পদের মালিক হওয়া যায় না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক ডিডি জসিম উদ্দীন এক সময়ে কুমিল্লায় ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে কারণে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বছরের শেষের দিকে দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। সম্প্রতি অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন করে সংস্থাটির উপসহকারী পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান রুবেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরেজিমনে অনুসন্ধান করে জানাগেছে, চট্টগ্রাম ও সীতাকুণ্ডের সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, ভূমি অফিস, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সরকারি-বেসরকারি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। যা বর্তমানে যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক জসিম উদ্দীনকে ফোন কিংবা মেসেজে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

 

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অত্যন্ত সাধারণ ঘর থেকে উঠে আসা একজন কর্মকর্তা কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হয়েছেন,সেটাই আমাদের অনুসন্ধানের লক্ষ্য। নিজ নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদের মালিকানা ও সম্পদ অর্জনের সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এক সময়ে কুমিল্লায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সে হিসেবে এটা কুমিল্লা থেকে অনুসন্ধান চলছে। যতটুকু নথিপত্র পাওয়া গেছে, তাতে অবৈধ সম্পদের সত্যতা রয়েছে। তবে অভিযোগে যা বলা হয়েছে, তার সবটুকু সত্য নয়। অনুসন্ধান শেষে হলে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে।অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডিডি জসিম উদ্দীন সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা হলেও তার বাবার পরিচয় সন্দ্বীপ।

 

তবে সম্পদের অভিযোগ মূলত সীতাকুণ্ডের সম্পদকে ঘিরেই। জসিম উদ্দিনের বাবা ছিল সামান্য দিনমজুর। তার শ্বশুর ছিলেন সরকারি ফায়ার সার্ভিসের একজন ফায়ারম্যান। তার বড় ভাই সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক। তার ছোট ভাই সরকারি ছোট পর্যায়ের চাকরি করে। রানা প্লাজার ঘটনার পর সরকারি কিছু নিয়ম গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে বেঁধে দেওয়ার পর থেকে জসিম উদ্দিন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মূলত অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রচুর সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ফায়ার ফাইটিং লাইসেন্স দেওয়া ও নবায়ন এবং ফায়ার ফাইটিংয়ের সব ইকুইপমেন্ট নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে বাধ্য করানো তার অসৎ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে তিনি ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রায় সব সম্পত্তি বউ, শালা, ভাইয়ের মেয়েসহ নিকট আত্মীয় স্বজনের নামে সম্পত্তি ক্রয় করেছেন।

 

অভিযোগে জসিম উদ্দীন একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মালিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড স্টেশন কলেজ রোডে কালি মন্দিরের সামনে গড়ে ওঠা বদিউল আলম নিউ মার্কেট, সীতাকুণ্ডের মধ্যম মহাদেবপুরের (কলেজ রোড), ৬ তলা ভবন, জসিম নিজ নামে সীতাকুণ্ড মধ্যম মহাদেবপুর চৌধুরী পাড়া এলাকায় তার নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবন। অন্যদিকে স্ত্রী পারভীন আক্তারের নামে সীতাকুণ্ডের চৌধুরী পাড়ায় ৬ তলা ভবন, কলেজ রোডে এসপি মার্কেট, স্ত্রীর নামে ১০০০ শতাংশ জমি, অন্য জায়গায় ২ শতাংশ জমিসহ দোকান রয়েছে। এছাড়া জসিম উদ্দীনের বড় ভাইয়ের নামে সীতাকুণ্ডে চৌধুরী পাড়ার পূর্ব পার্শ্বে খরিদকৃত প্রায় ২৪ শতাংশ জমি ও চট্টগ্রাম ইপিজেডের ভেতরে বড় ভাইয়ের ছেলের নামে একটি কারখানা রয়েছে। আর জসিম উদ্দীনের শ্যালক মো. সেলিমের নামে ৮০০ শতাংশ ও ৫০০ শতাংশ জমি এবং দুটি নোহা গাড়ি ও ২টি প্রাইভেট কারের মালিকানা রয়েছে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |