শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪০ অপরাহ্ন
নিজস্ব সংবাদদাতা : নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খানকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে। নেত্রকোণার পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ জানান, বুধবার সকাল ৬টার দিকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ সাবেক এই মেয়রকে আটক করে। তাকে ঢাকা থেকে নেত্রকোণায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে। জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর নেত্রকোণা মডেল থানায় বিস্ফোরক আইনে দায়ের তিনটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানান পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ। সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম খান শহরের চকপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্বাস আলী খানের ছেলে। নজরুল ইসলাম খান নেত্রকোণা পৌরসভার তিনবারের নির্বাচিত মেয়র। তার বাবা আব্বাস আলী খানও নেত্রকোণা পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
অভিযোগ আছে, নেত্রকোণা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি, রেলওয়ে জায়গা দখল করে শিশু পার্ক নির্মাণ,অবৈধ সম্পদ অর্জন,নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। দুর্নীতি দমন কমিশনের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল গঠনের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের স্বাক্ষরিত একটি পত্রে অনুসন্ধান করার নির্দেশ প্রদান করেন। গত ৮ জানুয়ারি তার স্বাক্ষরিত একটি পত্র সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবরই প্রেরণ করা হয়। যার স্মারক নং ১০০৬। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় পত্র পাওয়ার পর গত ২০ মার্চ -২০২৩ ইং তারিখে উপসচিব আব্দুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি পত্র ময়মনসিংহ স্থানীয় সরকার বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। নেত্রকোনা শহরের কাটলির বাসিন্দা মজিবুর রহমান জজ দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিদিনের কাগজকে তিনি মোবাইল ফোনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যার স্মারক নং ৪৫৭।
পত্রে বলা হয়েছে, নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম,পৌরসভার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ তার পছন্দের ঠিকাদারদের প্রদান করে অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধভাবে নিজ আত্মীয়-স্বজনদের পৌরসভায় চাকরি,সন্তানকে দিয়ে পৌরসভার অটো রিক্সার লাইসেন্স প্রদান ও দুই ছেলের নামে শতকোটি টাকা অর্জনের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন দুদক। ময়মনসিংহের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক ফরিদ আহমেদ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সাবেক মেয়র নজরুল ইসলামের অভিযোগের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার ময়মনসিংহের পরিচালক ফরিদ আহমেদ অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন।
এ সময় তারা অভিযোগের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। স্থানীয় সরকার ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক ফরিদ আহমদ জানান, দুদক কার্যালয় একটি অভিযোগ তদন্ত করতে আমাকে মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছেন । খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করবো। দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডল জানান, আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করবো। অনুসন্ধানে অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ মিললে দুদকের নিয়ম ও আইন অনুয়ায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। পৌরসভার উন্নয়ন খাতসহ বিভিন্ন কাজের অনিয়ম অনুসন্ধান করছি। অনিয়ম ৫০০ টাকার হোক বা শতকোটি টাকার হোক, অনিয়মের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা আপোষহীন। এ লক্ষ্য নিয়ে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করছি। তবে মেয়র নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। দিনক্ষণ নির্ধারণ করে তাকেও নোটিশ দিয়ে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হবে এবং তার সাক্ষাৎকার নেয়া হবে।