শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫০ পূর্বাহ্ন

আপডেট
ময়মনসিংহে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না যুব মহিলা লীগের

ময়মনসিংহে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না যুব মহিলা লীগের

খায়রুল আলম রফিক  বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একঝাঁক সাবেক নেত্রীকে নিয়ে ২০০২ সালের ৬ জুলাই প্রতিষ্ঠা করা হয় যুব মহিলা লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠন। দলের দুঃসময়ে রাজপথে সংগঠনটির ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী মহলও। সেই পথ থেকে যেন দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছে সংগঠনটি। একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নাম আসছে সংগঠনটির নেত্রীদের। হচ্ছে আলোচনা- সমালোচনা। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে মূল দল আওয়ামী লীগকেও। ক্ষুণ্ন হচ্ছে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বারবার সতর্ক করার পরও হুঁশ ফিরছে না।

২০২০ সালে যুব মহিলা লীগকে চরম সমলোচনায় ফেলেন শামীমা নূর পাপিয়া। সংগঠনের একটি জেলা শাখার এই শীর্ষ নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও নারীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ ছিল। গ্রেফতারের পরে তাকে নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও তখন ইমেজ সংকটে পড়ে সংগঠনটি। আওয়ামী লীগ নেতারাও তখন এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রীদের কড়া ভাষায় সতর্কও করেছিলেন। তবুও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসতে পারেননি সংগঠনটির নেত্রীরা।

আরেকটি ঘটনায় সমালোচনায়
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্যের (২৭) গোপন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর প্রতিবাদে গত সোমবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই নারী। এর আগে ওই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইবুন্যালে ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান জানান।

আদালত মামলাটি এফআইআর করার জন্য ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে কথা হলে তিনি মামলা রেকর্ড হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। গোপন ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় জেলা ও উপজেলায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

ওই মামলার ১নং আসামি হচ্ছেন— ময়মনসিংহ জেলা যুব মহিলা লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপ্না খন্দকার। অন্য আসামিরা হচ্ছেন— কাজী বাবু, গাড়িচালক হীরা, মশিউর রহমান রানা, রাকিবুল হাসান ও জাওয়াদ নির্ঝর।

ওসি মাঈন উদ্দিন বলেন, আদালতে হওয়া মামলার একটি কপি হাতে পেয়েছি। এতে বাদীর অভিযোগটি এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে গোপন ভিডিও ভাইরাল করার ঘটনায় বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী বলেন, আমি ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার শিকার। আমার নেত্রী স্বপ্না খন্দকার তার সহযোগীদের নিয়ে জোরপূর্বক আমাকে বাধ্য করে এই ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার দাবি করছি।

ভুক্তভোগী আরও বলেন, আমার মতো অনেক নারী স্বপ্না খন্দকারের ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার শিকার। কিন্তু ভয়ে কেউ স্বপ্নার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চায় না। রাজনীতির আঁড়ালে এই ধরনের অপরাধের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই স্বপ্না খন্দকারের পেশা ও নেশা। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে জেলা ও উপজেলা যুব মহিলা লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারাও এই মানহানিকর ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেছেন।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও জেলা যুব মহিলা লীগের ১ নম্বর সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক স্বপ্না খন্দকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় সদ্য বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ সভাপতি ইসরাত জাহান তনুর মদ্যপান ও ইয়াবা সেবনের কিছু ছবি ও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

তবে ইসরাত জাহান তনুর দাবি, ছবিগুলো ফেক ও ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় তার সাবেক স্বামী খাইরুল ইসলাম মনির তাদের পারিবারিক ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

প্রতিকার পেতে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তনু।
তনু সাংবাদিকদের প্রতিদিনের কাগজকে বলেন, ২০ সেকেন্ডের ভিডিওটি আমার সাবেক স্বামীর মোবাইলে ধারণ করা একটি পুরাতন ভিডিও। তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় সে এসব করে আমাকে হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করছেন। এ ঘটনায় আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।

এরপর ময়মনসিংহের এক সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তনুর মদ্যপান ও ইয়াবা সেবনের স্থিরচিত্র ও অশ্লীল ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে তা মূহর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পরবর্তীতে ওই ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে জানা যায়, মদ্যপান ও ইয়াবা সেবনের ছবি দুটি ফেক। তবে হোটেল কক্ষে আপত্তিকর ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তনুর নিজের বলে স্বীকার করেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |