বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন
রেজাউল করিম রেজা : বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিত বিবেচনায় বর্তমান সরকার ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে একজন পেশাদার, সৎ, মেধাবী ও কর্মঠ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ড.মো: আশরাফুর রহমানকে নিয়োগ দিয়েছে । ১৫ বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর পুলিশে যোগদান করেন এএসপি হিসাবে । ময়মনসিংহ রেঞ্জে ডিআইজি হিসেবে নিয়োগের আগে তিনি ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ছিলেন। ডিআইজি ড.মো: আশরাফুর রহমান পুলিশ সুপার হিসেবে চাপাইনবাবগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও সিলেট জেলা পুলিশ সুপার এর দায়িত্ব পালনসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করে প্রভূত সুনাম অর্জন করেছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে পুলিশ প্রধান হিসাবে যোগদানের পর ড.মো:আশরাফুর রহমান পুলিশ কার্যক্রম নিয়ে কি ভাবছেন এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার প্রতিদিনের কাগজ থেকে গ্রহণ করা হয় ।সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মো: খায়রুল আলম রফিক ।নিম্নে পুরো সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হলো:
প্রতিদিনের কাগজ: কেমন করছে ময়মনসিংহ রেঞ্জের পুলিশ?
ডিআইজি ড.মো: আশরাফুর রহমান : ইমেজ সংকটে থাকা পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি এবং পুলিশ সদস্যদের ট্রমা থেকে মুক্ত করে পুলিশের আইনি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া এখন আমাদের বর্তমান পুলিশ নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যেই পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির জন্য ময়মনসিংহ পুলিশ রেঞ্জের সকল থানা/ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে এবং অন্যান্য পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরকেও বদলি ও নতুন করে পদায়ন করার প্রক্রিয়া চলমান ।ফোর্স-অফিসারদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে এবং প্যারেড গ্রাউন্ডে বিধি মোতাবেক পিআরবি অনুযায়ী প্যারেড-পিটি অনুশীলনের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম চলমান । পুলিশ স্টেশন থেকে যেন মানুষ ভালো বেবহার পায় এবং এলাকার মানুষও তাদের ধৈর্য প্রদর্শন পূর্বক পুলিশকে সহযোগিতা করবে এটা এখন সবার আশা ।
প্রতিদিনের কাগজ: অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের নানা অপরাধ ও অনিয়ম বাহিনীর অর্জনকে ম্লান করে দেয়। বিষয়টি কীভাবে দেখেন? ডিআইজি ড.মো: আশরাফুর রহমান : পুলিশ বড় একটি প্রশিক্ষিত বাহিনী। এখানে নানা বংশের,নানা বর্ণের,নানা গোষ্টীর লোকজনের সমাবেশ ।রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পুলিশ সদস্যের বাছাই করে বেসিক ট্রেনিং এবং পরবর্তীতে ইন-হাউজ প্রশিক্ষণ এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে আইন,শৃঙ্খলা, মানবাধিকার এবং জন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে নিবিড় ট্রেনিং দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুলিশের উপযুক্ত করে জন-সেবার জন্য প্রস্তুত করা হয় । সরকারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সকল নির্দেশনা,সুযোগ এবং মনিটরিং নিশ্চিত করার পরেও যদি পেশাদার মনোভাব থেকে কোনও সদস্যের বিচ্যুতি নি:সন্দেহে পীড়াদায়ক । এই জন্য পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রভিশন রয়েছে ।সেটা বিভাগীয় তদন্ত ব্যবস্থা অথবা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত হলে সে মতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।অপেশাদারদের শাস্তি নিশ্চিত হলেই আমি মনে করি পুলিশের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং জনমনে আস্থা ফিরে আসবে ।
প্রতিদিনের কাগজ: বর্তমান পরিস্তিতিতে পুলিশ নিয়ে আপনার ভাবনা কি? ডিআইজি ড.মো:আশরাফুর রহমান: বিগত সরকারের সময়ে পুলিশকে রাজনৈতিক ব্যবহার এবং কতিপয় উর্ধ্বতন কর্মকতাদের দলীয় চিন্তায় অপেশাদার আচরণের কারণে পুলিশ তার ইমেজ হারিয়েছে। এখন এই ইমেজ ফিরিয়ে এনে কিভাবে জনগণের পাশে পুলিশকে দাঁড় করানো যায় এটিই আমার লক্ষ্য ।এইজন্য আমি বলেছি যে,পুলিশ বাদী হয়ে কোনও মামলা নিবে না । এর ফলে জনমনে সস্থি সৃষ্টি হয়েছে । আমরা ইতিমধ্যে যে সকল ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে সব মামলার সঠিক তদন্তের ব্যবস্থা করেছি যেন বাদী তার বিচার পায়। এছাড়াও বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং নতুন আঙ্গিকে শুরু হয়েছে ।
তাছাড়া ইতিপূর্বে চাঁদাবাজি,সরকারি মালামাল লুটপাটকারী,টেন্ডারবাজ,বালুবাজ,অন্যায় সম্পদ অর্জনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্ত আমরা তদন্ত শুরু করেছি । এরফলে জনমনে সস্থি ফিরবে বলে আমার বিশ্বাস। বর্তমানে মাদক,ইভ টিজিং,কিশোর অপরাধ এবং ডিজিটাল ক্রাইম বিশেষত নারীর প্রতি সহিংহ্সতা বৃদ্ধির ক্ষেত্র বিবেচনা করে ময়মনসিংহ রেঞ্জের অধীনে নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে কেন্দ্র করে স্টুডেন্টদের সাথে আলোচনা, সেমিনার ,ভিডিও প্রদর্শন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নিবিড় প্রচারণা ও জনসচেতনতার মাধ্যমে সামাজিক আন্দোলনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি এবং সেই সাথে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ এনফোর্সমেন্ট অব্যাহত রাখার বিষয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে । খুব শীগ্রই এর সুফল জনগণ পাবে ।
সড়ক মৃত্যু কমিয়ে আনা এবং ট্রাফিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে প্রতি তিন মাস পরপর ট্রাফিক সপ্তাহ পালনের সিদ্দান্ত নেওয়া হয়েছে । এছাড়াও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অত্যাধুনিক পুলিশ অপারেশন কন্ট্রোল রুম, সাইবার ক্রাইম ইউনিট গঠন এবং রেঞ্জ এক্টিভিটিস নিয়ে” রেঞ্জ পুলিশ মাসিক বুলেটিন “,ইউ টিউব চ্যানেল,ডেডিকেটেড ফেসবুক পেজ ইত্যাদি এর মাধ্যমে আমাদের কর্মসূচি জনগণের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চাই। এর মাধ্যমে সহজেই জনগণ তার মতামত প্রকাশ করতে পারবে এবং পুলিশ তার কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এছাড়া আমাদের পুলিশিং তো রয়েছেই । সব মিলিয়ে আমরা জনগণকে নিয়েই এগিয়ে যাবো।