বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: বিরতিহীন চলা শ্রমিক অবরোধে যেনো অচল হয়ে পড়েছে গাজীপুর। নগরীর ব্যস্ততম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা। এতে আশেপাশের প্রায় সব রাস্তাই বন্ধ রয়েছে গত তিন দিন ধরে।
আজ সোমবার বেলা ১২টায়ও মহাসড়ক থেকে সরে যাননি শ্রমিকরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা দফায় দফায় বুঝিয়েও মহাসড়ক থেকে শ্রমিকদের সরাতে পারেননি। গত দুই রাত মহাসড়কেই কাটিয়েছেন শ্রমিকরা। শ্রমিকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবেন।
এর আগে শনিবার সকাল নয়টা থেকে শ্রমিকরা মালেকের বাড়ি, কলম্বিয়া মোড় এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি কারখানার ১ হাজার ২০০ শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। বকেয়া বেতন ও কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখার দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
শ্রমিকরা জানান, গত ২৩ অক্টোবর বেতন পরিশোধের কথা থাকলেও মালিকপক্ষ তা করেনি। গত ২৪ অক্টোবর সেনাবাহিনী, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনা সভা হয়। ওই সভায় সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ৩ নভেম্বর এবং অক্টোবর মাসের বেতন ২০ নভেম্বর পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তা দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার টিএনজেড গ্রুপের জরুরি অফিস নোটিশে বলা হয়– শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতন ও ভাতা এদিন নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা ২৮ নভেম্বর দেওয়া হবে।
এ বিষয় বিবেচনা করে সবাইকে শনিবার থেকে উৎপাদনে মনোযোগী হয়ে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু শনিবার গ্রুপ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত জরুরি নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি, সেই সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ৭ নভেম্বর পূর্বঘোষিত নোটিশের মাধ্যমে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকার পরেও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা অনিবার্য করণে পরিশোধ করতে পারি নাই। আশা করছি, আগামী মাসের কোনো এক সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে।’ নোটিশে আরও বলা হয়, ‘বর্তমানে কারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই শনিবার কারখানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতি শিগগির বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করে কারখানার কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
শ্রমিকরা বলেন, গত এপ্রিল মাস থেকে কারখানা বন্ধ ছিল। সেপ্টেম্বরে কারখানা খুললেও দুই মাসের বেতন না দিয়ে কর্তৃপক্ষ সময় পার করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বারবার পরিশোধের তারিখ জানালেও বেতন দিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করতে হয়েছে।
আন্দোলন শুরুর প্রথম দিন শনিবার সারারাত শ্রমিকরা রাস্তায় কাটিয়েছেন। সালমা খাতুন নামে এক শ্রমিক জানান, বেতনের টাকায় আমার ও আমার বাবার সংসার চলে। ঘর ভাড়া দিতে হয়। দোকান থেকে চাল-ডাল বাকিতে নিয়ে খান। দোকানদার বাকি দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘরের মালিক বের হয়ে যেতে বলেছেন। আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই।
স্থানীয়রা জানান, এত দীর্ঘ সময় ধরে কোথাও শ্রমিক আন্দোলন তারা দেখেননি। আন্দোলনের কারণে আশপাশের জেলাগুলোয় সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিকল্প উপায়ে কেউ কেউ রাজধানীতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সেসব পথে যানজটের কারণে শেষ পর্যন্ত যানবাহন নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে পারেননি। অসংখ্য মানুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান বলেন, মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। ৫০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে মহাসড়কে শ্রমিকরা নেমে অবরোধ তৈরি করে রেখেছেন। এ কারণে মহাসড়কসহ আশেপাশে সব সড়কে আটকে আছে হাজার হাজার যানবাহন। মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প পথে চলাচলের চেষ্টা করছেন। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী অনেক বাস থেকে যাত্রীরা নেমে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। ফলে অনেক যানবাহন যাত্রীশূন্য অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম সমকালকে বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে আমরা কয়েক দফা আলোচনা করেছি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত তাদের বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতীতে মালিকপক্ষ কথা রাখেনি, এমন অভিযোগ তুলে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেননি।