শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

আপডেট
নান্দাইলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভাই, কী খাবে প্রতিবন্ধী বোন

নান্দাইলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভাই, কী খাবে প্রতিবন্ধী বোন

নান্দাইল প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন পরিবারের খোঁজ নেন না রিকশাচালক বাবা মজিবুর রহমান। মা আনোয়ারা বেগম স্থানীয় বাজারে পিঠা বিক্রি করতেন। তাঁর আয়েই চলত শাহাদাৎ হোসেন রাব্বির (২২) পরিবারের পাঁচ সদস্যের সংসার। বছরখানেক আগে মারা গেছেন আনোয়ারা। সংসারের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন রাব্বি। চলতি বছর ময়মনসিংহের নান্দাইলের খুররম খান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেন। তবে পুলিশের করা দুটি মামলায় নাম থাকায় বেশ কিছুদিন ধরে বাড়িতে আসতে পারছেন না রাব্বি। ফলে বিপাকে পড়েছে বাড়িতে থাকা ছোট তিন বোন। এদের একজন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। কাজ সেরে এসে তিন ছোট বোনের জন্য রান্নাও করতে হতো রাব্বিকে। এখন খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটছে তাদের।

রাব্বির বাড়ি নান্দাইলের মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামে। গত ৭ ডিসেম্বর এ ইউনিয়নের মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৮ ডিসেম্বর নান্দাইল মডেল থানার এসআই রুবেল মিয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেন। রাব্বি এ মামলার ১০৬ নম্বর আসামি। অথচ দরিদ্র পরিবারের ছেলে রাব্বি কখনোই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। এমন বক্তব্য দিয়ে উপজেলা যুবদলের (একাংশের) নেতা জহিরুল হক বলেন, রাব্বি ছাত্রদলের সমর্থক। তবে কোনো পদে নেই। পুলিশের করা ১৫ নভেম্বরের মামলায়ও তাঁকে আসামি করা হয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে সে পলাতক। এরপর ৮ ডিসেম্বরের মামলায়ও রাব্বিকে আসামি করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে মোয়াজ্জেমপুরে রাব্বির বাড়ির সন্ধান করলে লোকজন দেখিয়ে দেন। মূল রাস্তা থেকে জমির আল ধরে ওই বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী ছোট বোন মনি আক্তার (১৪) উঠানে বসে আছে। পাশে রান্না করছেন প্রতিবেশী স্মৃতি আক্তার। টিনের ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে।

প্রতিবেশী জীবুন্নাহার জানান, রাব্বির দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট তিন বোনের মধ্যে মনি জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী, হাঁটাচলা করতে পারে না। মাদ্রাসায় পড়ছে মুন্নী আক্তার (চতুর্থ শ্রেণি) ও তন্বী আক্তার (তৃতীয় শ্রেণি)। ঘরে নারী না থাকায় সবার রান্নাবান্না করতে হয় রাব্বিকে। তিনি পলাতক থাকায় নিজের কাজ শেষে জীবুন্নাহার প্রায়ই রান্না করে দেন তিনজনকে। তবে ঘরের চাল-ডালও ফুরিয়ে গেছে। বকুলা খাতুন নামের আরেক নারী বলেন, ‘আইজ রানতে দেরি অইছে। ছেড়িডা (মনি) অহনও বিয়াইন্না খাওন (নাশতা) খায় নাই।’

প্রতিবেশীদের অনেকে আসেন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে। বৃদ্ধ মকিম উদ্দিন বলেন, ভিটেবাড়ি ছাড়া কিছুই নেই রাব্বিদের। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। তার আয়ে বোনদের খাবারও জোগায়। রাজনীতি করার সময় কোথায়? তিনি আরও বলেন, ‘যে ঘটনায় পুলিশ হের (তার) নামে মামলা দিসে, হেইদিন তো বইনের বাচ্চা অইছে। মমিসিং বইনের বাইত (বাড়ি) আছিন রাব্বি। অন্য প্রতিবেশী রোস্তম আলী শেখ জানান, রাব্বির চাচাও অন্যের কাজ করে সংসার চালান। তাঁর স্ত্রীও পক্ষাঘাতে বিছানায়। রাব্বিকে মামলায় আসামি করা হয়েছে, পুলিশ ধরে নেবে– এসব ভেবে ওই নারী বিছানায় শুয়ে শুধু কান্নাকাটি করছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |