শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ অপরাহ্ন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ধরে রাখতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আদলে নির্মিত এ বোট ল্যান্ডিং র্যাম্পে এমপ্লি থিয়েটার, পর্যটন স্পর্ট, বাণিজ্যিক র্যাম্প, জেটি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে নির্মিত নয়নাভিরাম এ স্থাপনাটি সব বয়সের মানুষকে বিনোদন দিচ্ছে। জানান দিচ্ছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে।
গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইিডির) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এহসানুল হক জানান, বঙ্গবন্ধু লঞ্চ বা নৌকায় পাটাগাতীর মধুমতী নদীর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা,কোলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেছেন। এ লঞ্চ ঘাটটির সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মহান নেতার স্মৃতিবিজড়িত স্থানকে অম্লান করে রাখতে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার মধুমতি নদীর পাটাগাতী লঞ্চঘাটে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলায় এলজিইডির গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কাবিকো এন্ড জুয়েল কনস্ট্রাকশন এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার জন্য এমপ্লি থিয়েটার রয়েছে। ল্যাডিং এর পর্যটন স্পট সব বয়সের মানুষকে কাছে টানছে। এখানে পণ্য ওঠানামা করার জন্য বাণিজ্যিক র্যাম্প ও জেটি রয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সব সুবিধা রয়েছে ল্যান্ডিং এর সুবিশাল পরিসরে।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, সেখানে একটি টিকেট কাউন্টার, ওয়াশরুম, গ্রিন রুম ও কফিসপ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন পুরো স্থাপনাটি টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা অথবা উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এটি পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানে বেড়াতে এসে সব বয়সের মানুষ ইতিহাস ও ঐহিত্য সম্পর্কে জানতে পারছেন।
পাটগাতী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক (৭০) বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লঞ্চে বা স্ট্রিমারে করে পাটগাতী লঞ্চঘাটে এসে নামতেন। তারপর তিনি পায়ে হেটে পাটগাতী বাজারে আসতেন। এখান থেকে তিনি কোন সময় পায়ে হেটে বা নৌকায় করে টুঙ্গিপাড়া গ্রামের বাড়িতে যেতেন। এ লঞ্চ ঘাটের সাথে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে বিভিন্ন বয়সের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক স্থান। সরকার এটি সংরক্ষণ করেছে। এখানে বিভিন্ন বয়সের মানুষ বেড়াতে এসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলার শ্রীরামকান্দি গ্রামের শতবর্ষী আব্দুল হামিদ শেখ বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত পাটগাতী লঞ্চঘাট সরকার সংরক্ষণ করায় আমি প্রধানমন্ত্রী ও এলজিইডিকে স্বাগত জানাচ্ছি। টুঙ্গিপাড়া এসে দর্শণার্থীরা বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং দেখতে পারছেন। এটি দেখে দর্শনার্থীরা খুশি হচ্ছে। কিছুটা সময় তারা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানে কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারছেন।
পাটগাতী গ্রামের সামচু শেখ (৬০) বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার মধ্যে পাটগাতী বড় বন্দর ছিলো। এটি বড় ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। তাই পাটাগাতী লঞ্চ ঘাটের অন্তত ৩ শ’ বছরের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। সব সময় মানুষের পদ চারণায় গমগম করতো এ লঞ্চঘাট। ৯০ এর দশকের শুরুতেই নদী নাব্যতা হারাতে শুরু করে। পরে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিআইটিএ পাটগাতী লঞ্চঘাট থেকে পল্টুন প্রত্যাহার করে নেয়। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক এ লঞ্চঘাটটি বিলুপ্ত হয়ে পড়ে। পরিণত হয় বিরাণ ভূমিতে। এ লঞ্চঘাটের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে আধুনিক ল্যান্ডিং র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। তাই লঞ্চঘাটটি আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে।
এখানে বেড়াতে আসা ঢাকা শহরের ধানমন্ডি এলাকার শাহেন শাহ্ (৪৫) বলেন, স্থাপনাটি চমৎকার । পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসেছি। স্থানটি আমাদের হৃদয় কেড়েছে। এখানে প্রশস্ত সড়ক সড়ক, বসার জায়গা, ঘাটলা, সবুজ বনানী রয়েছে। দক্ষিণ মুখি এ স্থাপনায় এসে মধুমতী নদীর হাওয়ায় প্রাণ জুড়িয়ে গেছে। অনেক সময় কাটিয়েছি। এখানে এসে স্থানীয় বয়স্কাদের সাথে কথা বলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কেও অনেক কথা জানতে পেরেছি।
সূত্র: বাসস