শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২২ পূর্বাহ্ন

আপডেট
ইবিতে অডিও কাণ্ড: নেপথ্যের মানুষদের খুঁজতে কমিটি

ইবিতে অডিও কাণ্ড: নেপথ্যের মানুষদের খুঁজতে কমিটি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ইবি:
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসির নয়টি অডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ঘটনায় ভিসির কার্যালয়ে তালা দিয়ে তিনদিন আন্দোলন করেছে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা। ভিসির অপসারণ দাবি ও ভিসির ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড মাইকে বাজিয়ে আন্দোলন করে তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্তাব্যক্তির অডিও ফাঁস হয়েছে। এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে দাবি করে এসবের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে একটি কমিটি করেছে প্রশাসন।

রবিবার (১২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বিগত দুই/তিন সপ্তাহ যাবৎ এবং ইতোপূর্বেও বিভিন্ন সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের নামে অনেক ক্ষেত্রে অডিও, ভিডিও ধারণ করে ফেক আইডি খুলে তা গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া ও পত্র-পত্রিকায় প্রচার করা হচ্ছে। কখনও কখনও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাইক বাজিয়েও এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে। বিষয়গুলো সামাগ্রীকভাবে খতিয়ে দেখা ও এসবের নেপথ্যের মানুষদের চিহ্নিত করতে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।

কমিটিতে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও আইসিটি সেলের সিস্টেম এনালিস্ট মোঃ নাঈম মোরশেদকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, আই আই ই আর-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ মামুনুর রহমান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মিজানুর রহমান ও আইসিটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকনড. মোঃ সাদেক আলী।

কমিটিতে কর্তৃপক্ষের নিকট যথাশীঘ্রই প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এই কমিটি প্রয়োজনে যেকোন সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর, পেশাদারী প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির সহযোগিতা নিতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ‘ফারাহ জেবিন’ ও ‘মিসেস সালাম’ নামে পৃথক দুটি ফেসবুক আইডি থেকে ১৬ ও ১৭ই ফেব্রুয়ারি ভিসির পাঁচটি ফোনালাপের অডিও ভাইরাল হয়। সর্বশেষ ১৯ ও ২০শে ফেব্রুয়ারি আরও দুইটা অডিও ফাঁস হয়। পরে ওই আইডিগুলো থেকে পরপর আরও দুইটা অডিও ভাইরাল করা হয়। অডিওগুলোতে নিয়োগ বোর্ড, চাকরির প্রশ্নের বিষয়ে কথোপকথন, চাকরির বিনিময়ে আর্থিক লেনদেন ও শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারির নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ভিসিকে কথা বলতে শোনা যায়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ইবি থানায় জিডি করা হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১৮, ২০ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ভিসির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয় আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। এদের সকলেই ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী। এসময় তারা ভিসির অপসারণ দাবি করেন।

এদিকে গত ২০ ফেব্রুয়ারি গোপন ডিভাইসের খোঁজে ভিসির কার্যালয়ে ও বাসভবনে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়াও গত ১৯ ও ২২ ফেব্রুয়রি পৃথক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মোট পাঁচটি নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ভিসির একান্ত সচিব আইয়ূব আলীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে অডিও ফাঁসের ঘটনায় সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম। একইসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিসির অডিও ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরসমূহ বিশ্লেষণপূর্বক ‘অস্বস্তিকর অবস্থা’ থেকে পরিত্রানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে আচার্য, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এছাড়া অডিও ফাঁসের ঘটনায় গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার জন্য আহ্বান করেন তারা।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |