শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
মোঃ নাঈমুজ্জামান নাঈম:
আজ ২৪ আগস্ট। বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদ‚ত, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী আইভি রহমানের ১৮ তম শাহাদাতবার্ষিকী। তিনি ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি আলহাজ্ব জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী এবং কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের সংসদ সদস্য, বিসিবি সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হাসান পাপনের গর্ভধারিণী মা। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিন দিন পর ২৪ আগস্ট তিনি শাহাদতবরণ করেন। ১৯৪৪ সালের ৭ জুলাই বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার চন্ডিবের গ্রামে আইভি রহমানের জন্ম। বাবা মরহুম জালাল উদ্দিন আহমেদ ছিলেন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ। মা হাসিনা বেগম ছিলেন আদর্শ গৃহিণী। আট বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে আইভি ছিলেন পঞ্চম। তাঁর পুরো নাম জেবুন্নাহার আইভি। ১৯৫৮ সালের ২৭ জুন নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত আলহাজ্ব মোঃ জিল্লু রহমানের সঙ্গে বিয়ে হলে নামের পরে ‘রহমান’ যুক্ত হয় ।
এ নামেই তিনি পরিচিতি পান দেশব্যাপী। শুধু আওয়ামী রাজনীতির জন্য নয়, আইভি রহমান বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে পারিবারিকভাবেও জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার খালা শাশুড়ী। একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন, দুই মেয়ে তানিয়া বখত, ময়না এবং তাঁদের ছেলেমেয়ে ও স্বামী জিল্লুর রহমানকে নিয়ে তাঁর পারিবারিক জীবন ছিল সুখময়। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্যা আইভি রহমান ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে অসা¤প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির বর্ণাঢ্য জীবন শুরু করেন। ছাত্রজীবনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শোষিত বাংলা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায় সংগ্রামে অগ্রণী ভ‚মিকা পালন করেন। তিনি তখন ছাত্রলীগের প্রথম সারির নেত্রী এবং নীতিনির্ধারক ছিলেন। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। ভারতে গিয়ে সশস্ত্র ট্রেনিং গ্রহণ করে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ১৯৭৮ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়াামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এর আগে মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকার দায়িত্বও ছিলেন তিনি। রাজনীতি ছাড়াও তিনি আজীবন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাÐে নিজকে বেঁধে রেখেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ও জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। নারীর অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এবং সমাজের অবহেলিত শিশু, প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল ভ‚মিকা অবিস্মরণীয়। আইভি রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতি বছরের মতো এবারও ভৈরবে নেওয়াা হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মস‚চি। এর মধ্যে সকাল ৭টায় ভৈরব বাজারে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ । সকাল সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে খতমে কোরআন। একই সময়ে তাঁর নিজ বাড়ি শহরের ভৈরবপুর এলাকার আইভি ভবনে অনুষ্ঠিত হবে কোরআনখানি ও মিলাদ মাহফিল। এছাড়া তার বাবার বাড়ি জন্ম¯’ান চন্ডিবেরও তার জন্য দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব ট্টমা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় নির্মিত আইভি স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে দলীয় নেতাকর্মীসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সকাল ১০টায় দলীয় কার্যালয়ে শহীদ আইভি রহমানের প্রতিকৃতিতে দলীয় নেতাকর্মীরা মাল্যদান করবেন। সকাল ১১টায় ভৈরব এমপি পাইলট গালর্স হাই স্কুলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ যোহর প্রতিটি মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ দোয়া, মিলাদ মাহফিলসহ মোনাজাত। এছাড়াও পাপনের নির্বাচনী এলাকা কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসানের নেতৃত্বে উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়নে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মস‚চির মধ্যে শহিদ আইভি রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে শহীদ আইভি রহমানের নামে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে দুটি স্মৃতিস্তম্ভ ,আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়াম ও তাঁর নিজ গ্রাম পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকায় আরো একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া তাঁকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারি জিল্লু রহমান মহিলা কলেজের একটি হোস্টেলের নামকরণ করা হয়েছে।