সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন
২০১৮ সালে ২৯তম সম্মেলনের পর পেরিয়ে গেছে চার বছর। বর্তমান সভাপতি-সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার পরও পেরিয়েছে ৩ বছর। দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্বে থাকলেও আশানুরূপ সাংগঠনিক শক্তি অর্জনে ব্যর্থতার অভিযোগ আছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। আছে অছাত্র, বিবাহিত এবং বিভিন্ন মামলার আসামিদের পদ দেওয়ার অভিযোগ। এর মাঝে সম্মেলনপ্রত্যাশী নেতাদের তোপের মুখে একাধিকবার পড়েছেন তারা দুজন। তবে সম্মেলন করার কোনো উদ্যোগ নেননি তারা।
এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব আনতে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন হতে পারে আগামী অক্টোবরে।
আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এ বিষয়ে বলেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় আমরা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি বছরের অক্টোবরেই ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফিরলে আমরা তার সঙ্গে বৈঠকে বসবো। তখন তিনি সম্মেলনের তারিখ জানাবেন।
‘এ মাসে আবার প্রধানমন্ত্রীরর জাতিসংঘ সফরও রয়েছে। এটি শেষ করে এ মাসেই দেশে ফিরবেন তিনি। আমরা আশা করছি, অক্টোবরের মধ্যে সম্মেলনের কাজ সেরে ফেলতে পারবো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তবে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক হয়নি। নেত্রী যখনই তার সুবিধামতো তারিখের কথা জানাবেন, তখনই সম্মেলন করা হবে।
এদিকে একাধিক সূত্র বলছে, আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা আছে এমন ছাত্রনেতাদের জীবনবৃত্তান্ত ও কার্যক্রমের তালিকা সংগ্রহ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এখন হেভিওয়েট প্রার্থীদের অধিকতর তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ বা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ লক্ষ্য করেই ছাত্রনেতাদের বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও জমা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের কাজ করছেন।
সম্মেলন নিয়ে যা ভাবছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা
আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির কথা জেনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সোহান খান বলেন, সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ধন্যবাদ জানাই। জয়-লেখকের কাছ থেকে ছাত্রলীগ মুক্ত হচ্ছে, এটা অনেক আনন্দের। আমরা চাই, নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে ছাত্রলীগ তার ঐতিহ্য, ধারাবাহিকতা ও গতিশীলতা ফিরে পাক।
ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান বলেন, নানান কারণে ছাত্রলীগের সম্মেলন এতদিন হয়নি। এতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের সম্মেলন করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাতে আমরা আনন্দিত।
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদৌস আলম বলেন, ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। দুঃখজনকভাবে গত কমিটি গঠনের সময় সম্মেলন করা হয়নি।
‘বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলাম। নেত্রীর নির্দেশনায় সম্মেলন হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে কাজ করার প্রেরণা-উৎসাহ আসবে।’
সম্মেলনের বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান জয় বলেন, আমরা আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী, অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করে দিতে অনুরোধ করেছিলাম। তিনি বলেছেন, জানাবেন।
ছাত্রলীগের সবশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ওই বছরের জুলাইয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে পদ হারান এই দুই নেতা।
শোভন ও রাব্বানীকে দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কারের পর কপাল খুলে যায় বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের। প্রথমে তারা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তাদের ভারমুক্ত করা হয়।
জয় ও লেখক ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসার পরপরই কেন্দ্রীয় কমিটির একটি বড় অংশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে জয়-লেখক থেকে দূরে সরে যায় অংশটি।
জয়-লেখকের বিরোধিতা করে আসা নেতারা গত দুই বছর ধরেই ৩০তম সম্মেলনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। মধুর ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন জায়গায় তারা একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছেন।