বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন
স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবিতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। সেখানে উঠতে লাগে বাঁশের পাটাতন। এই পাটাতন বানানো হয়েছে স্থানীয়দের সেচ্ছাশ্রমে।
বান্দরবান সদর উপজেলার রাজভিলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড কেংড়াছড়ি পাড়ার স্থানীয় খালের উপর এই সেতুর অবস্থান। শনিবার (১৩ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তি এড়াতে যাতায়াতের জন্য পাটাতন নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেংড়াছড়ি পাড়ায় ৬০ পরিবারের তিনশত এর বেশি বাসিন্দা রয়েছে। এদের মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থী ৪০ জনের অধিক। বর্ষাকালে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এটি। পাড়াবাসীদের চলাচলের সুবিধার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর অর্থায়নে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সংযোগ সড়কের অভাবে স্থানীয়দের দুর্ভোগ কমছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী কাজ না করে সেতুর পশ্চিম পাশে কোনো গাইড ওয়াল না দিয়ে দায়সারাভাবে মাটি ভরাট করে সম্পূর্ণ বিল উঠিয়ে নিয়েছে ঠিকাদার মোঃ আরিফ। যা বৃষ্টির পানিতে অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙ্গে সে দিকেও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
পাড়ার ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী তঞ্চঙ্গ্যা জানান, শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকায় সেতুর নিচ দিয়ে হেঁটে পারাপার হয়ে স্কুলে যেতেন। এখন বর্ষায় খালে পানি বেশী হওয়ায় হেটে পার হওয়া যায় না। বৃষ্টি বেশী হলে অনেক দিন স্কুলেও যাওয়া যায় না। তাই পাড়াবাসীরা মিলে সেতুতে উঠার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে সংযোগ তৈরি করেছে শনিবার।
পাড়ার আরেক বাসিন্দা ধর্ম চরণ তঞ্চঙ্গ্যা (৩২) জানান, তিন শতাধিক মানুষের বসবাস এই কেংড়া ছড়ি পাড়াতে। রয়েছে প্রায় ৪০জনের অধিক স্কুল পড়ুয়া কোমল মতি শিক্ষার্থী। বর্ষায় খালটি পারাপার হতে অনেক সমস্যা হয়। উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত অসম্পূর্ণ সংযোগ সড়ক বিহীন এই সেতুটি দু’বছর যাবৎ দূর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই পাড়াবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সেতুটি ব্যবহার করতে বাঁশের বেড়া দিয়ে পাটাতন তৈরি করেছে খালটি পারাপারের জন্য।
রাজবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্য অংপ্রু মারমা জানান, কেংড়াছড়ি খালের উপর সংযোগ সড়ক বিহীন উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত সেতুটি ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। এনিয়ে উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীর সাথে কথা হয়েছে। দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মান করে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা এর সত্বাধিকারী রতন সেন তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তার লাইসেন্সে ৪০ লাখ টাকা উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্ধে রাজবিলার কেংড়াছড়ি খালের উপর ঠিকাদার মো. আরিফ সেতুটি নির্মাণ করেছিল। কাজ শেষ হওয়ার ফাইনাল বিলও উত্তোলন করা হয়েছে। জামানত উত্তোলনের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে জানতে বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সোমনাথ চৌধুরীর সাথে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করলে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। এছাড়া তিনি ওই প্রকল্পের দ্বায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও প্রকল্প ব্যয় ও কোন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ সেতু নির্মাণ কাজ করেছে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিট এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত সাংবাদিককে জানান, স্থানীয়রা প্রথমে একটি কালভার্ট চেয়েছিল পরে পর্যবেক্ষণ করে ব্রীজের অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্রীজের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় ঠিকাদারকে ৪০ লাখ টাকার সম্পূর্ণ বিল পরিশোধ করা হয়। সংযোগ সড়কের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসে আরো ২০ লাখ টাকা অনুমোদন করা হয়।