শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনোয়ার হোসেন নামে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার এক আসামির মৃত্যু হয়েছে। গত ১১আগস্ট ভোর রাতে কারাবন্দি ওই যুবকের মৃত্যু হয়।
কারা সূত্র জানায়, হার্ট অ্যাটাকে আনোয়ারের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু পরিবারের দাবি গ্রেফতারের পর চান্দিনা থানায় তাকে ব্যাপক নির্যাতন করেছে পুলিশ। আনোয়ার হোসেন (৩৫) জেলার মুরাদনগর উপজেলার গান্ধ্রা এলাকার মৃত কেরামত আলীর ছেলে।
গত ১৭ জুলাই রাতে চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ১৭ জুলাই চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি ডাকাতি মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে আনোয়ার হোসেন, জসিম উদ্দিন, বশির এবং খলিল নামে ৪ সন্দেহ ভাজনকে আটক করা হয়। থানায় নিয়ে যাচাই-বাছাই শেষে বশির এবং খলিলকে মুচলেকা নিয়ে স্থানীয়দের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় আনোয়ারকে ১৮জুলাই আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। গত ১১আগস্ট ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম কমলের উপস্থিতিতে তার লাশের সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লাশ গ্রহণ কিংবা তারপরও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আসাদুর রহমান জানান, ১৮ জুলাই আনোয়ারকে গ্রহনের সময় তার প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে, তার কোন সমস্যা কিংবা অসুস্থতা আছে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। কোন ধরনের ওষুধ সেবন করে কিনা তাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। সে কোন ধরনের অসুবিধার কথা বলেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী বন্দিদের বরাতে তিনি জানান, ১০ আগস্ট সন্ধ্যায় অন্য বন্দিদের সঙ্গে সে টিভি দেখে সুস্থ অবস্থায়ই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ভোর ৩টার দিকে বুকে ব্যাথা অনুভব করলে অন্য বন্দিরা তাকে কারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় অবস্থার অবনতি হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ওই কারাগারের জেল সুপার মোঃ শাহজাহান বলেন, প্রাথমিক ভাবে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
কিন্তু ২৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে আনোয়ারের পরিবার সাংবাদিকদের জানান, একটি সিএনজি চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আনোয়ার এবং তার ভাই জসিমকে বাড়ি থেকে গ্রেফতারের পর থানায় নিয়ে নির্যাতন করে পুলিশ। তৎকালীন থানার ওসির নির্দেশে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং সঙ্গীয় ফোর্স আনোয়ারকে নির্যাতন করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিনুর রহমান জানান, আনোয়ারকে গ্রেফতারের পর সহকারী পুলিশ সুপার এবং থানার ওসি স্যারের নির্দেশক্রমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়, থানায় তাকে নির্যাতনের অভিযোগ একেবারেই ভিত্তিহীন, কোন অসুস্থ আসামিকে আদালত এবং কারাকর্তৃপক্ষ কখনো গ্রহণ করে না, তাছাড়া তার পরিবারও তখন কোন অভিযোগ করেনি, তারপর আমি বদলি হয়ে চান্দিনা থেকে চলে যাই, খবর নিয়ে জেনেছি কারাগারে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখন কার ইন্দনে এবং প্ররোচনায় তার পরিবার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে সেটা বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে চান্দিনা থানার তৎকালীন ওসি আরিফুর রহমান বলেন, আনোয়ারকে থানায় কোন ধরনের নির্যাতন করা হয়নি, গভীর রাতে গ্রেফতারের পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।