বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বক্সগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ মাওলানা মহিউদ্দিন গত সাত বছর ধরে পরিবার নিয়ে আমেরিকায় বাস করছেন। দীর্ঘ এ সময় কমিটিকে ম্যানেজ করে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন তিনি। তবে বিষয়টি জানতে পেরে চলতি বছরের ১২ মার্চ থেকে তার বেতন বন্ধ করে দেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর অসুস্থতার কথা বলে আমেরিকায় আসা-যাওয়া করেন মাওলানা মহিউদ্দিন। এ সময়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বেতন উত্তোলন করেন তিনি। মহিউদ্দিন বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের বাকীহাটি গ্রামের মৃত আশ্রাফ উদ্দিনের ছেলে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে আরবি প্রভাষক হিসেবে বক্সগঞ্জ ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় নিয়োগ পান মাওলানা মহিউদ্দিন। পরবর্তীতে সহকারী অধ্যক্ষ হিসেবে তার পদোন্নতি হয়।
২০১২ সালে তার বড় মেয়ে আমেরিকায় চলে যান। এর দুবছর পর বড় ছেলেও আমেরিকায় চলে যান। ২০১৫ সালে পরিবার নিয়ে মহিউদ্দিনও সেখানে চলে যান। গত সাত বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করে আসছেন। ডিজিটাল ফিঙ্গার মেশিনেও ফিঙ্গার দেন, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও করেন। প্রতি মাসে কমিটিকে ম্যানেজ করে বেতন-ভাতাও উত্তেলন করেন।
৩৪ হাজার টাকা বেতন ও ঈদ বোনাস মিলে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন মহিউদ্দিন। বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দীন চলতি বছরের ১২ মার্চ থেকে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন।
সূত্রে জানা গেছে, মহিউদ্দিনের এ অপকর্মে সহায়তা করেছেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ও কম্পিউটার শিক্ষক মনির।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষের বক্তব্য নিতে গেলে কম্পিউটার শিক্ষক মনির সাংবাদিকদের তথ্য দিতে অধ্যক্ষকে নিষেধ করেন।
অভিযুক্ত সহকারী অধ্যক্ষ মাওলানা মো. মহিউদ্দিন আমেরিকায় থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ছোটভাই মাওলানা নেছার উদ্দিন বলেন, ২০১৫ সালে আমার ভাই আমেরিকা যান। তিনি প্রতি বছর যে প্রসেসিংয়ে আসা-যাওয়া করেন, তাতে উনার কোনো সমস্যা হয় না। তবে উনার বড় একটা অপারেশন হয়েছে, এ জন্য আসতে দেরি হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, মহিউদ্দিন আমেরিকায় আসা-যাওয়া করেন। সর্বশেষ মার্চ মাসের দিকে তিনি আমাদের জানিয়েছেন তিনি অসুস্থ। ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়েছেন। পরে শুনি তিনি আমেরিকায় চলে গেছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালে তিনি বেতন-ভাতা বন্ধের নির্দেশ দেন। পরে আমরা তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেই।
মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মফিজুর রহমান মাসুদ বলেন, তিনি কমিটিতে নতুন। দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষক মহিউদ্দিনের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেন। আগামী মিটিংয়ে উনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দীন বলেন, মাওলানা মহিউদ্দিন আমেরিকায় আসা যাওয়া করতেন। এ বছর থেকে অনুপস্থিত আছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন, বিষয়টি জেনেছি। শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।