শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০ ধারার ১, ২ ও ৩ উপধারার ক্ষমতাবলে দলের চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতাকে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে এসব বিধান অপব্যবহারের অভিযোগ এনে ধারাগুলো স্থগিত ঘোষণা করেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ।
পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ এর উপধারা ১ এ বর্ণিত প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে বিরোধী দলীয় নেতা বুধবার দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে দেওয়া এক চিঠিতে এ ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে তিনি গঠনতন্ত্র এর এসব ধারায় ইতিপূর্বে দল থেকে বাদ দেওয়া মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ সিনিয়র নেতা এবং কমিটি থেকে বাদ দেওয়া নেতাকর্মীদের দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য জিএম কাদেরকে নির্দেশনা দেন।
জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে উদ্দেশ্য করে বিদেশ থেকে পাঠানো রওশন এরশাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির সর্বময় ক্ষমতার সংরক্ষক হিসেবে পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০ এর উপধারা ১: প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে চেয়ারম্যানের বিশেষ ক্ষমতা এবং মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ধারা ২০ এর উপধারা ১ (১) এর ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ ও ছ এবং উপধারা ২ এর ক, খ, গ এবং উপধারা ৩ এ বর্ণিত অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারীমূলক বিধান স্থগিত করে ইতিপূর্বে জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও কমিটি থেকে বাদ দেওয়া সকল নেতাকর্মীকে পার্টিতে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেওয়া হচ্ছে।
লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের নবম জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদিত পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ এর উপধারা ১ (১) এর ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ ও ছ এবং উপধারা ২ এর ক, খ, গ এবং উপধারা ৩ এ বর্ণিত সব বিধানের অপব্যবহার হচ্ছে। যা মৌলিক গণতন্ত্র ও সংবিধান পরিপন্থী এবং স্বেচ্ছাচারীমূলক। একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন প্রণীত বিধানাবলী অনুযায়ী তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সেখানে দলের নেতাকর্মীদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের সুযোগ নেই। পাশাপাশি সারাদেশের নেতাকর্মীরাও গঠনতন্ত্র বর্ণিত এ ধরণের অগণতান্ত্রিক ও অগঠনতান্ত্রিক ধারার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এধরণের অগণতান্ত্রিক ধারা উপধারা বাতিল এখন লাখ লাখ নেতাকর্মী সমর্থকদের প্রাণের দাবি বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
রওশন এরশাদ আরও বলেন, আপনার (জাপা চেয়ারম্যান) মন্তব্য অনুযায়ী রাষ্ট্রের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ ও সরকার পরিচালনায় যেমন এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে; একইভাবে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক উল্লেখিত ধারার আবহে দলের গঠনতন্ত্রের মধ্যেও ধারা ২০ এর উপধারাসমূহ গৃহীত হয়েছে। যে ধারা অনুযায়ী আপনি যখন ইচ্ছা তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যে কাউকে দায়িত্ব থেকে বিনা নোটিশে অব্যাহতি ও বহিষ্কার করে একজন রাজনৈতিক কর্মীর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে চলছেন। প্রকৃতপক্ষে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ গৃহীত হওয়ার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র এর ২০ ধারা উপধারাগুলো বর্ণিত বিধানাবলীর সাথে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ন্যূনতম কোনও সামঞ্জস্য নেই।
‘আমি পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ এর উপধারা ১ প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতাবলে সারাদেশের লাখ লাখ নেতাকর্মীর দাবি মেনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে দশম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত গঠনতন্ত্রের ধারা ২০ এর উপধারাগুলো স্থগিত ঘোষণা করছি।’
চিঠিতে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সাম্প্রতিক দলীয় কার্যক্রম পর্যালোচনা করে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত দিনে দলের বহু সিনিয়র, অভিজ্ঞ, দায়িত্বশীল পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। যোগ্য ও ত্যাগীদের পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে, যা পার্টিকে দিন দিন দুর্বল করার নামান্তর। পার্টির অগণতান্ত্রিক ভাব আবহ সৃষ্টির কারণে নেতাকর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে পার্টি খণ্ডিত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
‘এরকম একটি পরিস্থিতির অবসানের লক্ষে এবং পার্টি শক্তিশালী করার উদ্দেশে আমার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেসিডিয়াম সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক এমপি জিয়াউল হক, সাবেক এমপি আব্দুল গাফফার বিশ্বাস; তাছাড়া নবম কাউন্সিলের পর কমিটিতে না রাখা সাবেক মন্ত্রী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য এম এ সাত্তার, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, সাবেক উপদেষ্টা অ্যাড, মাহবুবুল আলম বাচ্চু, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন, নুরুল ইসলাম নুরুসহ দেশজুড়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখা নেতাদের দলে অন্তর্ভুক্ত হোক’।