সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট
কক্সবাজারে স্বৈরাচারের ‘দোসর’ সাংবাদিকদের তালিকা প্রকাশ করলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফরিদগঞ্জে একই ব্যক্তির সরকারি চাকরিতে বয়স ৫১, মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় ৭১! আগের দিন অভিযোগ, পরদিন প্রত্যাহার, ৮৮ দিনে পদোন্নতি ফরিদপুরের সাবেক টিআই দম্পতির আরও সোয়া ৭ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ অবৈধভাবে শতকোটি টাকার মালিক, এসপি শাহজাহানের বক্তব্য জানতে চায় দুদক রাজশাহীতে ২৩ হাজার ৫শ ১০ জন শিক্ষার্থীকে এ এইচপিভি টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করল তরফদার, বিজয় নিশ্চিত ইমরুলের পুলিশের থাকা-খাওয়ার মান সন্তোষজনক নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কত ক্ষমতা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের, প্রশ্ন তাসরিফের শিক্ষা বোর্ডে পাথর-লাঠি-কাঠ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
বিতর্কিত এমপিদের নিয়ে চিন্তা আওয়ামীলীগের

বিতর্কিত এমপিদের নিয়ে চিন্তা আওয়ামীলীগের

শহিদুল ইসলাম/হায়দার আলী :
আওয়ামী লীগের এমপিদের একাংশ এলাকায় বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা দলের মধ্যেও ব্যাপক কোন্দল তৈরি করে স্থানীয় পর্যায়ে দলকে দুর্বল করে ফেলেছেন। এই ধরনের সংসদ সদস্য ও নেতাদের নিয়ে চিন্তিত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে তাদের বোঝা মনে করা হচ্ছে। এই বোঝা সরিয়ে দিতে চায় আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন পাওয়া কঠিন হবে। বরিশাল-৪ ( হিজলা- মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া দলে শুদ্ধি অভিযানেরই অংশ বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজকে বলেন,”দলে যারা বিভেদ সৃষ্টি করবে, অনিয়ম ও দুর্নীতি করবে তাদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জানা গেছে, দলের ভিতরে তো বটেই সাধারণ মানুষের মধ্যেও সংসদ সদস্যদের একাংশ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। তাদের ব্যাপারে প্রচলিত ছাড়াও বিকল্প উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটির সংসদ সদস্যদের বড় একটি অংশ ২০১৪ সালে কোনো বিরোধিতা এবং ভোট ছাড়াই সংসদ সদস্য হয়েছেন। আর ২০১৮ সালেও বলতে গেলে তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে তারা এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়, আগামী নির্বাচনে যদি সব দল অংশ নেয় এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে তাদের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে সংশয় আছে দলের মধ্যেই। কারণ একপাক্ষিক নির্বাচন দিয়ে অবস্থা বোঝা কঠিন।

আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকেরা যেভাবেই হোক সেটা বোঝার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন আগে একটি বৈঠকে অংশ নেয়া অন্তত দুইজন সাংগঠনিক সস্পাদক জানান, শেখ হাসিনা তাদের কাছে দলের তৃণমূলের প্রকৃত চিত্র জানতে চেয়েছেন। তারা যাতে খোলামেলা কথা বলতে পারেন তাই দলের আর কোনো নেতা বা সিনিয়র নেতাদের রাখা হয়নি। তারা আগেই যার যার বিভাগের প্রতিবেদন দিয়েছেন। শেখ হাসিনা আবারো আপডেট প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। একটি সূত্র জানায়, সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদনে স্থানীয় পর্যায়ে দলের কোন্দল, গ্রুপিং,মাদক ব্যবসার সাথে নিজে ও তার সন্তানরা জড়িত, ত্যাগী নেতাদের অবস্থা, দলের দুর্বলতা ও ইতিবাচক দিক এসব বিষয় উঠে এসেছে। আর তারা আলাদাভাবে এমপিদের আমলানামা দিয়েছেন। তাতে তাদের কর্মকাণ্ড এবং এলাকায় জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে আছে তা উঠে আসছে। আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন,”ওই বৈঠকে আমরা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেছি। তাতে আমরা চেষ্টা করেছি সারাদেশে দলের প্রকৃত চিত্র, সাংগঠনিক কোন্দল, নেতাদের অবস্থা সব কিছু তুলে ধরতে । আমাদের বলা হয়েছে দলের খারাপ সময়ে যারা ত্যাগী নেতা-কর্মী তাদের বিভিন্ন কমিটিতে স্থান দিতে। তারা যদি কোনো কারণে কোথাও কোণঠাসা অবস্থায় থেকে থাকেন তাদের খোঁজ খবর নিয়ে তাদের পাশে থাকতে।

তিনি বলেন,”আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এমপিদের অবস্থা বলতে গিয়ে দেখি তার কাছে আরো বিস্তারিত তথ্য আছে। তিনি তার নিজস্ব চ্যানেলে সব এমপিরই আপডেট তথ্য রাখছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রিয়তা আর গ্রহণযোগ্যতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কে কয়বার এমপি ছিলেন সেটা তার কাছে বিবেচ্য হচ্ছে না বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলের মধ্যে নানা বিভেদ ও কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। সেগুলো নানা প্রক্রিয়ায় দূর করা হচ্ছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অন্তত ১০০ জন সংসদ সদস্য নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন এবং কেউ কেউ দূর্নীতি-অনিয়ম করে অবৈধ পথে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন ও নিজ নিজ এলাকায় সন্তান- পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন । তাদের নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত হচ্ছে ।

তারা অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে ত্যাগী নেতা কর্মীদের কোনঠাসা করে “এমপি লীগ ‘ ভাই লীগ,চাচা লীগ, হুজুর লীগ গড়ে তুলেছেন। তারাই এখন স্থানীয় পর্যায়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠৈছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, ডিও লেটার বানিজ্য, দখলবাজিসহ শিক্ষক ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগও আছে। শুধু তাই নয় তাদের অনুসারী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের হয়রানি এবং নাটক সাজিয়ে মামলা আসামি করে হয়রানি করার অভিযোগে অনেকেই বিতর্কিত হয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ, বরিশাল ও টাঙ্গাইল,ময়মনসিংহসহ দেশের কয়েকটি স্থানে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে হত্যাকাণ্ড এবং এমপি ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের অবৈধ সম্পদ ,জালিয়াতি এবং দুর্নীতি-অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করার কারণে স্থানীয় সাংবাদিকদের পুলিশ দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করাও মত ঘটনাও ঘটেছে।

ময়মনসিংহের একজন সাংসদ ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধানের বরাবরে স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দরা স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। সেখানে দূর্নীতি-অনিয়ম অবৈধ টাকা অর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি বাণিজ্য, আত্মীয়-স্বজনের নামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করে চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে শত শত কোটি টাকা অর্জন করার বিষয়ও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ দৈনিক প্রতিদিনের কাগজকে বলেন,”ওখানে(পঙ্কজ দেবনাথের এলাকা) অভ্যন্তরীণ কোন্দল মারাত্মক আবার ধারণ করেছে। ক্ষয়ক্ষতির দিকে চলে গেছে । প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটেছে। একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিলো ।

জেলা কমিটি ওই পরিস্থিতি জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। কেন্দ্র সেটা বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,”আরো অনেক অভিযোগ আমাদের কাছে আছে। যেখানে অভিযোগ গুরুতর সেখানে আমরা শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেখানে অভিযোগ অত গুরুতর নয় সেখানে আমরা একটু সফট ব্যবস্থা নিচ্ছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে মুখ দেখে বা বড় নেতা দেখে মনোনয়ন দেয়া হবে না, দেয়া হবে জনপ্রিয়তা দেখে। প্রত্যেকের ব্যাপারে আলাদা রিপোর্ট আছে। যদি কেউ অনৈতিক কাজে যুক্ত হয়ে থাকেন, মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হন তিনি মনোনয়ন পাবেন না।
জানা গেছে, তাই যারা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কিন্তু জনপ্রিয় তাদের দল থেকে বাদ দেয়া হলেও আবার ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |