সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন

দুইদিন আগেই কর্মীদের ঢল, ঘুম হোগলপাটিতে

দুইদিন আগেই কর্মীদের ঢল, ঘুম হোগলপাটিতে

অনলাইন  ডেস্ক:

গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণায় দুইদিন আগেই বরিশালের সমাবেশস্থল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে (বেলস পার্ক) জড়ো হয়েছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সেখানেই সামিয়ানা টানিয়ে তার নিচে ঘাসের ওপর চাদর, কাপড়, হোগলপাটি ও প্লাস্টিকের চট বিছিয়ে ঘুমাচ্ছেন তারা। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) বিকেল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে নেতাকর্মীদের অনেককেই মাঠেই কাটানোর ব্যবস্থা করতে দেখা গেছে।

কেউ মাথার নিচে ব্যাগ, কেউ কাঁথা, কেউ খাবারের প্যাকেট আবার কেউ ডেকরেটর টেবিলের ওপরের অংশ বালিশ হিসেবে ব্যবহার করছেন। আবার হালকা শীতল আবহাওয়ার মধ্যে চাদর ও কাঁথাও দিয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা অভিযোগ করে জানান, আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে বাস ও লঞ্চ ধর্মঘট। এ কারণে দুইদিন আগেই তারা এসেছেন। পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হুমকি ও বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বিকেল থেকে পথে পথে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মী বুঝতে পারলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেককে ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। এরপরও সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন তারা। সন্ধ্যার আগেই লোকারণ্য হয়ে উঠছে সমাবেশস্থল। স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো বেলস পার্ক।

সমাবেশস্থলে আসা ভোলা পৌর ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. এমদাদ হোসেন বলেন, আমরা প্রায় ২০০ জন একসঙ্গে এসেছি। আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। লঞ্চ বন্ধ ছিলো। স্পিডবোটও ভোলা থেকে ছাড়তে দেওয়া হচ্ছে না। ভোলা থেকে ভেঙে ভেঙে আসতে হয়েছে। দুপুর থেকেই সমাবেশস্থলে আছি। আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।

ভোলার লালমোহন উপজেলার বিএনপি কর্মী ওহাব আলী বলেন, মাছের ট্রলারে করে আসতে হয়েছে। তারপরও পথে বাধা-বিঘ্ন সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সমাবেশে আসার পর সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। আমরা একসঙ্গে ৩০ জন এসেছি। কেউ উঠেছেন আত্মীয়ের বাসায়, কেউবা মেস ও হোটেলে। তবে সবাই সন্ধ্যার পর সমাবেশস্থলে এসেছি। এখন চাঙা লাগছে।

ভোলার চরফ্যাশন থেকে সমাবেশস্থলে আসা আব্দুর রহিম সরদার বলেন, লঞ্চ চলতে দেবে না এই খবরে আজই চলে আসছি বরিশালে। আর এই রাতে কোথাও না গিয়ে সমাবেশমঞ্চের পাশেই ট্রেপলের নিচে বিছানা করেছি হোগলপাটি বিছিয়ে। আর মাথার বালিশ না থাকায় ডেকরেটর টেবিলের ওপরের অংশ দিয়েছি মাথার নিচে। সমাবেশ সফল করতে আমার মতো হাজারো নেতাকর্মী এ সমাবেশস্থলে রাত দু’টি কাটাবে।

পিরোজপুরের কাউখালী থেকে আসা কৃষকদল কর্মী মোনাব্বর হোসেন বলেন, সকালেই বরিশালে আসছি, দু’দিন থাকতে হবে তাই শুকনো খাবারের সঙ্গে লুঙ্গি-গেঞ্জি ও কাঁথা নিয়ে আসছি। দলীয় কর্মসূচির জন্য দু’টি রাত এখানে কাটাতে কারো কষ্ট হবে না। এদিকে রাতে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষার্থে কয়েলও বিতরণ করেছেন স্থানীয় নেতারা।

সমাবেশস্থলে মঞ্চের পাশেই চলছে রান্নার আয়োজন, আবার অনেকে প্যাকেটজাত খাবার কিনে খাচ্ছেন।

বরগুনা থেকে সমাবেশে যোগ দিতে আসা সোহরাব হোসেন বলেন, রাতে কারো বাসায় কিংবা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা না করতে পেরে সমাবেশমঞ্চের পাশে প্যান্ডেলের নিচে ঘুমানো ব্যবস্থা করেছেন। সেই সঙ্গে পাশেই রাতের খাবারের জন্য খিচুরি রান্না বসিয়েছেন।

ভোলা থেকে আসা মিলন বলেন, রান্নার ঝামেলা এড়াতে রাতে প্যাকেটে করে বিরিয়ানি এনে খেয়েছেন তিন বন্ধু মিলে। তবে সকাল থেকে টিমের সবাই মিলে রান্না করে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই এ মাঠেই রান্না করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

এদিকে মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, জেলা উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা মাঠেই লাকড়ি ও গ্যাসের চুলা বসিয়ে রান্নার আয়োজন করছেন। তবে এ রাতে অনেকে প্রস্তুত করা খাবার প্যাকেটে এনেও খাচ্ছেন। অনেক জায়গায় প্যাকেট নিতে কর্মীদের দীর্ঘলাইনেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

বরিশাল মহানগর বিএনপি আহ্বায়ক মো. মনিরুজ্জামান খান ফারুক বলেন, সমাবেশস্থল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক) নেতাকর্মী ও সমর্থকে এখনই প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে। সমাবেশের এখনো দুইদিন বাকি। নেতাকর্মীরা পথে পথে বাধা ও হয়রানির অভিযোগ করছেন। তবে বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। আশা করছি বরিশালের গণসমাবেশে জনসমুদ্রের জোয়ার সৃষ্টি হবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |