শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

আপডেট
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি আয়

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি আয়

বিশেষ প্রতিনিধি: সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকির মৌসুম শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলেরা নিজ নিজ এলাকায় ফিরেছেন। এবার পরিবেশ ভালো থাকায় বেশি রোজগার হয়েছে জেলেদের। সেইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ বছর শুঁটকি পল্লি থেকে রাজস্ব এসেছে ছয় কোটি ১৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে চার কোটি টাকা। গত বছর রাজস্ব এসেছিল চার কোটি ১৮ লাখ টাকা।

সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘দুবলার চরের শুঁটকি পল্লি থেকে এ বছর ছয় কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৮৭১ টাকা রাজস্ব এসেছে। গত মৌসুমে এসেছিল চার কোটি ১৮ লাখ টাকা। এবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাড়ে চার কোটি টাকা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও বেশি মাছ আহরণ হওয়ায় রাজস্ব বেড়েছে।’

দুবলার চর সংরক্ষিত এলাকা উল্লেখ করে বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘সেটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছে সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগ। জেলেরা বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরলেও দুবলার চরে অবস্থান করায় রাজস্ব আদায় করা হয়।’

বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে শুঁটকি মৌসুম শুরু হয়েছিল। শেষ হয় গত ৩১ মার্চ। পাঁচ মাসে প্রায় দেড় হাজার বহরদারের অধীনে ১২ হাজার জেলে বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ আহরণ করেছেন। চরে এ বছরও জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে দেড় হাজার ঘর, ৬৩টি ডিপো এবং শতাধিক দোকান স্থাপন করা হয়।

সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া শিবসা ও পশুর নদী একত্রিত হয়ে কুঙ্গা নামে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিশেছে। বঙ্গোপসাগরের সৈকতঘেঁষা কুঙ্গা নদীর পূর্ব পাড়ের দ্বীপটি দুবলার চর নামে পরিচিত। প্রতি বছর খুলনা অঞ্চলের জেলেরা সেখানে অবস্থান নেন ও বঙ্গোপসাগর থেকে নানা প্রজাতির মাছ আহরণ করেন। সেই মাছ চরের রোদে শুঁটকি করে বাজারজাত করেন।

খুলনার পাইকগাছার জেলে জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বহরে দুটি ট্রলার, চারটি জাল ও ১৭ জন কর্মচারী ছিলেন। মৌসুমের শুরুতে দুবলার চরে যেতে আমাদের খরচ হয়েছিল প্রায় ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে কিছু ঋণ ও মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছি। ১৭ জন কর্মচারীর প্রত্যেকের বেতন ছিল আট থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এবার জ্বালানির দাম বেশি ছিল। খাবারে খরচও বেশি হয়েছে। তবে মাছ বেশি পেয়েছি। এজন্য লাভ হয়েছে। এবার কমবেশি সবার লাভ হয়েছে।’

পাইকগাছার মাহমুদকাটি জেলেপল্লির বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘নৌকা, জাল, খাবার, পানি—সব কিছু মিলিয়ে ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুদে নিয়েছি। ১০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বছরে ১৩ লাখ টাকা দিতে হয়। তবু এবার মাছ বেশি ধরা পড়ায় লাভ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সাগর পাড়ের চরগুলোতে জেলেরা শুঁটকি তৈরি করেন। ওই সময় সুপেয় পানি ও চিকিৎসার সংকটে পড়তে হয়। এই দুটি বিষয় নিশ্চিত করার জন্য প্রতি বছরই আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই। কিন্তু সমাধান হয় না। তবে প্রতি বছরই বাড়ছে রাজস্ব।’

রামনাথপুরের জেলে পাচু বিশ্বাস বলেন, ‘ধারদেনা করে সাগরে মাছ ধরতে যাই। ফিরে এসেও দেনায় থাকতে হয়। তবে বেশি মাছ পেলে কিছুটা স্বস্তি পাই।’

কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে ইউনুস শেখ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে পরিবেশ ভালো থাকায় বেশি মাছ পেয়েছি। এজন্য লাভ হয়েছে।’

বন বিভাগের দুবলার চর টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সুন্দরবনে এখন ডাকাতের উৎপাত না থাকায় জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারেন। মৌসুমের শুরুতে তারা চরে ঘর নির্মাণ করেন। সেইসঙ্গে মাছ শুকানোর জন্য মাচা তৈরি করেন। এসব তৈরির জন্য তারা বাঁশ ও গাছসহ অন্যান্য মালামাল সঙ্গে নিয়ে আসেন। সুন্দরবনের কোনও গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয় না। কেউ যাতে গোপনে গাছ না কাটেন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সে জন্য টহল দেয় বন বিভাগ।’

তিনি বলেন, ‘দুবলার চরের আশপাশের এলাকা সুন্দরবনের অভয়ারণ্য। সেখানে জেলারা যাতে অবৈধভাবে বনে প্রবেশ ও উৎপাত করতে না পারে, সে জন্য বন বিভাগ এবং আমাদের নজর রাখতে হয়। সাধারণত প্রতি কেজি মাছ আহরণের জন্য জেলেদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। জেলেরা প্রতি ১৫ দিনের মধ্যে সাত দিন মাছ আহরণ করেন। বাকি সাত দিন সেই মাছ শুঁটকি করেন। ১৫ দিন পর পর প্রত্যেকে কী পরিমাণ মাছ আহরণ করলেন, তা হিসাব করে রাজস্ব আদায় করা হয়।’

কে,আই,এ/ঈ,ম

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |